যানজটে নাকাল পৌরবাসী  (সময়ের অসঙ্গতি- ১)

যানজটে নাকাল পৌরবাসী  (সময়ের অসঙ্গতি- ১)

মেহের মামুন:.......

তীব্র যানজটের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত নাকাল হচ্ছে মুকসুদপুর পৌরশহরের বাসিন্দারা। শহরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও থমকে যায়। অটোরিকশা, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, লোকাল বাস, ট্রাক, নছিমন, করিমনে যানজট যেন শহরের নিত্যদিনের চিত্র। এলাকাবাসীর একমাত্র প্রধান সড়ক উপজেলা সদরের প্রবেশ পথ কলেজ মোড় থেকে কমলাপুর ব্রিজ পর্যন্ত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লেগেই থাকে যানজট। প্রতিনিয়ত প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত যানবাহন চলে এই সড়কে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অটোরিকশা, ইজিবাইক, মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের আনাগোনা। ট্রাফিক আইন মানে না সকল যানবাহন। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শহরের ব্যবসায়ী, অফিসগামী মানুষ সাধারণ পথচারীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে মুকসুদপুর এখন পরিণত হয়েছে যানজটের শহরে। শহরের প্রধান সড়কটি প্রশস্ত না করা, রাস্তার দুপাশ দখল করে অবৈধ অটোরিকসা পার্কিং অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচলে এই যানজটের সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন মুকসুদপুরের সাধারণ মানুষ। সড়ক অপ্রশস্তের কারণে এবং অবৈধ অটোরিক্সা পার্কিং এর কারণে জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকেও আটকা পড়তে হয় যানজটের কবলে। ট্রাফিক আইন না মেনে বিভিন্ন যানবাহন যেখানে সেখানে পার্কিং করে যাত্রী ওঠানো নামানো হয়। ফলে একপ্রকার ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী পথচারীদের। এতে থাকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। শুধু আশঙ্কা থাকে বল্লে ভুল হবে উপজেলা সদরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদরের একমাত্র প্রবেশ পথ কলেজ মোড় পার হয়ে উপজেলা পরিষদের ২নং গেটের সামনে থেকে সোনালী ব্যাংক মোড় হয়ে উপজেলা পরিষদের ১নং গেট পর্যন্ত স্বঘোশিত অটোরিকসা ষ্ট্যান্ড হয়েছে। এই এলাকায় কয়েক শত অটোরিকসা অটোভ্যান রাস্তার দুপাশ দখল করে সদর থেকে বলনারায়ন, গেড়াখোলাসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রী উঠানামা করায়। উপজেলা পরিষদ গেট থেকে শুরু করে কমলাপুর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুপাশ দখল করে কয়েক শত অটোরিকসা অটো ভ্যান মুকসুদপুর সদর থেকে জলিরপাড়, উজানী, বনগ্রাম-বাটিকামারীসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রী উঠানামা করায়। এই এলাকায় প্রতিটি অটোরিকসার গ্লাসে চক দিয়ে স্বাক্ষর করে জনে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা চাঁদা তুলে এসব অটোরিকসাকে অবৈধভাবে পার্কিং করার সুযোগ করে দেয়। সড়কে যানবাহনের যানজট নিরসনের নামে রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে অটোরিকসা পার্কিং করিয়ে যানজটের সৃষ্টি করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ৩টি জায়গা থেকে প্রতিদিন চন্ডীবরদী গ্রামের জাহাঙ্গীর, টেংরাখোলা গ্রামের মিজান মোল্যা এবং কমলাপুর গ্রামের ইসমাইল গড়ে শতাধিক অটোরিকসা থেকে তিন হাজার টাকা তোলেন। সুত্র জানায়, কোন কোন দিন এই টাকার পরিমাণ আরও বাড়ে। জনশ্রুতি আছে মুকসুদপুর পৌরসভা থেকে বার্ষিক ইজারার মাধ্যমে এই চাঁদা তোলা হয় কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ একথা স্বীকার করেনি। তাহলে জনসাধারণের মাঝে প্রশ্ন এই চাঁদার টাকা যায় কোথায়? কাদের ছত্রছাঁয়ায় রাস্তার যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে? এছাড়াও সদর বাজার চৌরঙ্গীর মোড়, চন্ডিবরদী জামে মসজিদের সামনে কয়েক অটোভ্যান অটোরিকসা পার্কিং করে যাত্রী উঠানামা করায়। চারটি সড়ক এসে চৌরঙ্গীমোড় এলাকায় মিশেছে। তাই এটা খুবই ব্যস্ত মোড়। এই মোড়ে সড়কটির তিন পাশে সারি সারি অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। পথচারীদের চলাচলের জায়গাতেও অটোরিকাশা রাখা রয়েছে। সড়কের মাঝখানে অল্প জায়গা দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। পথচারীরা কষ্ট করে মোড়টি পারাপার হচ্ছেন। সড়কের দুই পাশে অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করছেন। বড় কোনো গাড়ি এলেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়। এতে করে বাজারের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। উপজেলার সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মুকসুদপুরসহ আসপাশের কয়েক উপজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে হাজার লোক চিকিৎসা নেন। এই চিকিৎসা নিতে এসে রোগীদের চরম ভোগান্তী পোহাতে হয়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে রাস্তার দুপাশ দখল করে অটোরিকসা পার্কি করে যাত্রী উঠানামায় করানোকে কেন্দ্র করে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে রোগী বহনকারী যানবাহনের হাসপাতালে প্রবেশ করতে বাধার মুখে পড়তে হয়। বিভিন্ন সময়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটে যায় এই যানজটের কারণে।  

বনগ্রাম থেকে অটোরিকসায় করে আসা এক যাত্রী আযাদ শেখ জানান, বনগ্রাম থেকে অটোরিকসায় করে মুকসুদপুর বাজারে আসছি। হাসপাতাল গেটের সামনে আসলে এক লোক রাস্তার মাঝখানে অটো থামিয়ে অটোর গ্লাসে চক দিয়ে স্বাক্ষর করে ১০ টাকা নিলেন। এতে করে পেছনে যত গাড়ি ছিলো সবই থামতে বাধ্য হয় ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই

মুকসুদপুর সদর বাজারের প্রবেশপথ কমলাপুর ব্রিজ পার হয়ে সরকারি এসজে উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শুরু ছুটির সময় শিক্ষার্থীরা ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যানজটে আটকে থাকতে হয়। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, পুরো সড়কটি দখল করে স্ট্যান্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে। চারপাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় অটোরিকশা এবং অটোভ্যান। পায়ে হেঁটেও যাওয়ার উপায় থাকে না। ফুটপাতসহ সব জায়গায় অটোরিকশা রাখা হয়। সড়কের মাঝখানে একটু খালি থাকে। সেখান দিয়ে যানবাহন মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। ফলে তীব্র যানজট লেগেই থাকে সব সময়। দ্রুত এই যানজট নিরসনের দাবি করেন তারা

ইকবাল হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, যত্রতত্র অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় সড়কে যানজট লেগেই থাকে। এতে সড়ক পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আশপাশে একটি সরকারি স্কুল, কলেজ বেসরকারি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে সড়ক নিয়মিত পার হতে হয়। ছাড়া শহরে ঢোকার প্রধান সড়কও এটি। ফলে মোড়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অবৈধ স্ট্যান্ডটির কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন

এবিষয়য়ে মুকসুদপুর পৌরসভায় যোগাযোগ করা হলে, পৌর মেয়র আশরাফুল আলম শিমুল দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্যানেল মেয়র এব্যাপারে কোন বক্তব্য দেননি। 

মুকসুদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আশরাফুল আলম মুকসুদপুর সংবাদকে বলেন, ‘পুলিশের একার পক্ষে এই যানজট নিরসন করা সম্ভব নয়। সমন্বয় করে এই যানজট নিরসন করতে হবে।মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম ইমাম রাজী টুলু মুকসুদপুর সংবাদকে বলেন, ‘যানজটের মুল কারণ হচ্ছে রাস্তা প্রশস্ত না করা। অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে সকাল থেকেই এই যানজট সৃষ্টি হয়। সড়ক প্রশস্ত হলে সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে।আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু এর কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা। তবে অচিরেই এই যানজট নিরসেনের ব্যবস্থা করা হবে

 মুকসুদপুর সদরে যানযট সমস্যা বেশ পুরোনো। এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপির প্রতিশ্রুতির বরাতে ২০২১ সালে অক্টোবর মুকসুদপুর সংবাদউন্নত মুকসুদপুর শহর এখন সময়ের ব্যাপার : ফারুক খানশিরোনামে সবিস্তার সংবাদ প্রকাশ করে। এবং পরবর্তী ১৬ অক্টোবর সংখ্যায়উন্নত মুকসুদপুর শহর এখন সময়ের দাবিশিরোনামে বিশেষ সম্পাদকীয় প্রকাশ পায়। সংবাদ প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল বরইতলা-মুকসুদপুর সংযোগ সড়কের কমলাপুর ব্রিজ থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মুকসুদপুর থানা, উপজেলা পরিষদ নিজ নিজ সীমানা প্রাচীর সরিয়ে প্রয়োজন মতো সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দিবে। প্রয়োজনে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান মালিকানাধীন জমি উপযুক্ত মূল্য-ক্ষতি পূরণের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হবে। সড়ক চওড়া হলে এবং সড়কে দোকান পসরা না বসালে যানজট থাকবে না। যানজট নিরসনে এমপির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সড়ক বর্ধিত করণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে থানা উপজেলা পরিষদসহ প্রতিষ্ঠাগুলো তাদের সীমানা প্রাচীর সরিয়ে নেওয়ার কাজ করলেও বাকী কাজ এখনো শুরুই হয়নি। ফলে যানজট আগের মতোই, বেড়েছে