মহান স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার - মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন
পাকিস্তানী শোষক-শাসনের অন্যায়-অবিচার, নির্যাতন-জুলুম, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহাসিক অর্জন বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভুত্থ্যানের ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামের পরম্পরায় সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পরেও পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাশাসক গোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালির আন্দোলন চিরতরে মুছে দিতে অপারেশন সার্চলাইট নামের ষড়যন্ত্র নক্সা তৈরি করে। একাত্তরের ২৬ মার্চ জিরো আওয়ারে বর্বর হায়নার দল ঘুমন্ত নিরস্ত্র জনমানুষের উপর ভারী মারনাস্ত্র নিয়ে অতর্কিত আক্রমণে ঝাপিয়ে পড়ে দেশজুড়ে গণহত্যা শুরু করে। এই আক্রমণ প্রতিরোধে জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানম-ির বত্রিশ নম্বরের নিজ বাড়িতে গ্রেফতারের পূর্বে বেতারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তাঁর সাতই মার্চের ভাষণ ও ঘোষণার নির্দেশ মেনে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বাধীনতার ঘোষণা-আহ্বানে উদ্বুদ্ধ জাতি নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ, তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী ময়দানে ৯৩হাজার পাকিস্থানী সেনা নিঃশর্ত আতœসমর্পণ করলে বিজয় অর্জিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে গর্বিত দেশবাসী সকলকে স্বাধীনতা দিবসের নিরন্তর শুভেচ্ছা।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিকামী জনতা ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষ দেশব্যাপী ঝাপিয়ে পড়ে শত্রুর মোকাবেলা করে অসীম সাহসে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সীমান্তবর্তী ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে ১৪ এপ্রিল সরকার গঠন করে কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর বৈদ্যনাথতলায় আ¤্রকাননে ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এর মৌলনীতি যুক্ত করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনা করেন। পাকিস্তানী পক্ষে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম দলীয়ভাবে এবং ইসলামপন্থি কিছু কুলাঙ্গার সহযোগী মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানী দালাল বাহিনী হিসেবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। নয় মাসব্যাপী নির্বিচার হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগে বাংলার মাটি-আকাশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ, চার লক্ষ আটষট্টি হাজার ছয়শত (সূত্র:ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি) মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে কাক্সিক্ষত বিজয় আসে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে; বর্বর পাকিস্তানী হানাদার সদস্যের নিঃশর্ত আতœসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয়যাত্রা সূচিত হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে ফিরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এবং দ্রুত জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূল নীতি ধারণ করে সংবিধান প্রণয়ন সম্পন্ন করেন। এই নীতিমালাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে স্বীকৃত। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বৎসরের মাথায় পরাজিত শক্তির নীলনক্সা, মদদ ও সহযোগিতায় এদেশীয় কুলাঙ্গার ঘাতক সদস্যরা পচাত্তরের পনেরই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। প্রবাসে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। জাতিরজনককে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির উচ্ছিষ্টভোগী স্বাধীনতাবিরোধী ও সুবিধাবাদী ক্ষমতা দখলকারী বর্ণচোরা গোষ্ঠী ২১ বৎসর ক্ষমতা দখল করে সংবিধানের মূলনীতিতে বেয়নেট চালিয়ে পরিবর্তন করে
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কুলাঙ্গার একটি গোষ্ঠী স্বাধীনতার বিরোধীতা করে পাকিস্তানীদের পদলেহনে শান্তিকমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে গণহত্যা ধর্ষণ লুন্ঠন অগ্নিসংযোগ করে যুদ্ধাপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। তাদের অনেকের বিচার হলেও তারা বাংলাদেশ মেনে নেয়নি, পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে পচাত্তর সালে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে নিজ বাড়িতে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে জেলে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতার উল্টো পথে দেশ পাকিস্তানী কলোনীতে পরিণত করে। জাতিরজনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসজীবন থেকে ফিরে আওয়ামী লীগ ও দেশবাসীকে সংগঠিত করে দীর্ঘ একুশ বৎসর পরে ক্ষমতায় এসে হৃত গৌরব পুনরোদ্ধারে আতœনিয়োগ করেছেন। আজ আমরা মহান স্বাধীনতা দিবস যথাযোগ্য মর্যদায় সাড়ম্বরে উদযাপন করতে পারছি। তবে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি, ঘাতক-সহযোগী চক্রের নীলনক্সা এখনো অব্যাহত আছে। দেশের অভ্যন্তরে তাদের সহযোগীরা বহুমুখি আঘাত হানতে সক্রিয়। স্বাধীনতার তেপ্পান্ন বছর পরেও স্বাধীনতা পক্ষের দাবিদার সেজে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক উপাত্ত সমূহ নিয়ে অপকৌশল-যুক্তি দাঁড় করে স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করতে সচেষ্ট রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার বিকল্প নেই।
মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি বাংলাদেশের অহঙ্কার; রক্ত ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত। আমরা আশা করি, দৃঢ় বিশ্বাস করি বাঙালির জাতিগত অস্তিত্বের বিরুদ্ধে কোন আঘাত এলে অবশ্যই বাঙলা মায়ের সন্তানেরা দৃপ্ত পদক্ষেপে সর্বাতœক লড়াইয়ে প্রতিরোধে শামিল হবেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রিয় পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী এবং গর্বিত দেশবাসী সকলকে বিজয় দিবসের নিরন্তর শুভেচ্ছা। জয় বাংলা।



Admin
