মুকসুদপুর সংবাদ ও তার দায়

মুকসুদপুর সংবাদ ও তার দায়

নজরুল ইসলাম পাননু.....

মুকসুদপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মুকসুদপুর সংবাদ সমার্থক হয়ে যায়। কেননা মফলস্বল থেকে ধারাবাহিক পঁচিশ বছর ধরে যার প্রকাশ তা কিন্তু কম কৃতিত্বের বিষয় নয়! বছর পুর্তি ও প্রতিষ্ঠার জন্মোৎসব বর্ণাঢ্য আয়োজনে সম্পন্ন হওয়া এটাই স্বভাবিক-; এ আনন্দের ভাগিদার হতে  পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আবার সবটুকু   এমনও মনে করি না। কারণ পাঠক ও লেখকদেরও একটা ভিন্ন দায় আছে। আর সেটাই হচ্ছে খুবই গুরুত্বের বা পারস্পারিক দায়বদ্ধতার। এটাকে যত নিবিড় করা যাবে এর উৎকর্ষতা ততটা বিকশিত হবে।

এখানে সোজা পথে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। শ্রম ঘাম মেধা মনন ও এক বুক ঝুঁকির ঝাঁপি মাথায় নিয়ে চলতে হয়। মোট কথা এক তারের  উপর দিয়ে হেঁটে চলা। সম্পাদক সাহেব যে এ বিষয়টি বুঝেন না তা নয়! অনেক সহিষ্ণুতা তাঁর, এটাও আমরা জানি। এর জন্য তাঁর কাছ থেকে অনেক আক্ষেপের কথাও শুনেছি মাঝে মধ্যে। কিন্তু সৃজনশীলতা যার নেশা তাকে কোন পেশায় আটকানো যায় না। কেননা সংবাদ পত্রের পরিবেশনা একটা উৎকৃষ্ট আর্ট। এটাকে পেশার অভিধায় আটকানো যায় না।

 সব সময়ই সুন্দরের অপর পিঠ থাকে রক্তমাখা। অজানা অধ্যায়ের খোঁজ আমরা ক’জন রাখি? - এমন বাস্তবতার ভেতর দিয়ে সম্পাদকে তাঁর পরিবারদের নিয়ে যেতে হয়। আমার ধারণা সমস্ত অনুভূতির সব চোখ খোলা রেখে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। অটল ধৈর্যের না হতে পারলে খেই হারাতে হয়। কিন্তু মুকসুদপুর সংবাদের সেরকম কিছু  দেখা যায়নি।

 ধৈর্যের পরীক্ষায় পেছন পা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যেমন সম্পাদকের পথিকৃৎ কুষ্টিয়া, কুমারখালীর কাঙাল হরিনাথ মজুমদার (১৮৩৩ খ্রি—১৮৯৬ খ্রি:) এর মতো নিরন্তর পথ চলা। মত প্রকাশের জন্য অনেক ঝুঁকিতে থেকেও ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। ইতিহাসে তাই নমস্য আজ কাঙাল হরিনাথ।

জানি পত্রিকার এই মান-এ সম্পাদক হায়দার হোসেন খুশি হন না। তিনি চান আরো অনেক। সমাজ ব্যবচ্ছেদ করে অনুপুঙ্খ সমালোচনা করার ধার-ই বা ক’জনের আছে?  সেই বোদ্ধা ধারালো পাঠক লেখক চাই। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের জন্য পাঠক লেখকদের কিন্তু একটা দায় আছে।  সে কাজটি পাঠক ও  লেখক সমাজ করে থাকে। দ্বান্দি¦কতার  ছোঁয়ায় তাতে পত্রিকার আগামী - বেগবান হয়।

সংবাদ পত্রিকাতো একটা সুন্দর আর্ট। সমাজ জীবনের নানাবিধ বিষয় পরিপূরকভাবে জড়িয়ে থাকে, এর সাথে সবসময়ই নিরন্তর সঙঘাতের  ভেতর দিয়ে নতুন স্বপ্নে প্রাণ পায় ও বিকশিত হয়। তবে পত্রিকা দর্শনটা বড় কথা; একে স্থির বিশ্বাসে ধারণ করতে না পারা গেলে এক সময় ফিকে হয়ে গতি হারায়। তাই পাঠক লেখক একটা পত্রিকার প্রধান নিয়ামক বলে আমার মনে হয়। ধারালো সমালোচনা ছাড়া পত্রিকা প্রাণ পায় না।

বোধের স্থুলতায় আমার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, —চাওয়ার মাঝে অনেক না চাওয়ার চাওয়া থাকে কিন্তু সেটা কি ? আমার মনে হয় দায়বদ্ধতা ও শিল্প চেতনা। কারণে অকারণে এর পরিম-লেই থাকতে হয়; এর থেকে বেরিয়ে আসারও কোন সুযোগ নেই।— মুকসুদপুর সংবাদকে যেতে হবে আরো দূর, বলতে হবে আরো কথা; আমরা পাঠের অপেক্ষায়! মুকসুদপুর সংবাদ দীর্ঘজীবী  হোক, উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। কৃতজ্ঞতা জানাতে নাম উল্লেখ করে কাউকে ছোট করতে চাই না।

#নজরুল ইসলাম পান্নু, প্রাক্তন অধ্যক্ষ বাটিকামারী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।