সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হাবিবুরের মরদেহ ২০দিন পর কবর হতে উত্তোলন - নেপথ্যে সম্পত্তির বিরোধ
সরদার মজিবুর রহমান: সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হাবিবুরের মরদেহ ২০ দিন পর কবর থেকে উত্তোলনের নেপথ্যে সম্পত্তির বিরোধ। শুধুমাত্র সম্পত্তি এবং সেই সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকায় একটি দুর্ঘটনা ঘটার পরে নিকটত্মীয়দের সর্বসম্মতিক্রমে পোষ্ট মর্টেম ছাড়া দাফন করা হয়। সেই দাফনের পরে শুধুমাত্র সম্পত্তি রেখে যাওযায় দাফন হওয়ার ২০ দিন পরে লাশ উত্তোলন এবং পোষ্টমর্টেম করা হয়।
উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের মুনিরকান্দি গ্রামের মৌসুমী (ভূষিমালের) ব্যবসায়ী কাজী হাবিবুর রহমান ১৭ এপ্রিল বুধবার ভোর রাতে মুনিরকান্দি থেকে অটোযোগে টেকেরহাট বাজারে যাওয়ার পথে মুড়িয়াজোড়া স্থানে বিপরীত দিকের কাঁচামাল ভর্তি অটোর সংগে ধাক্কা লেগে অটোযাত্রী হাবিবুর মারাত্নক আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজৈর হাসপাতালে মারা যান। পরে স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে থানা পুলিশের ছাড়পত্রে ময়নাতদন্ত ছাড়াই একই দিন দুপুরে লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনার পরে ২৯ এপ্রিল তারিখে নিহতের বোন আঞ্জুল হক কাজী হাবিবুর রহমানকে হত্যা করার অভিযোগে আদালতে ভাতিজা সালমান ফারসীসহ পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে দাফনের ২০দিন পরে ৭ মে তার মরদেহ ম্যাজিস্্েরটের উপস্থিতে কবর থেকে উত্তোলন করা হলে পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় আলোচিত হচ্ছে।
হত্যা মামলার আসামী ৫জন। ভাতিজা সালমান ফারসী, ভাতিজা সাব্বির কাজী, আত্নীয় মাদারীপুর জেলার কাজল শিকদার, জুবায়ের হোসেন জুয়েল ও নিহতের ভাই কাজী আতিয়ার রহমান। স্বাক্ষী নিহতের ভাই কাজী রফিকুল ইসলাম, কাজী সাইদুর রহমান, ভাতিজা আজিম কাজী, বোন রিঞ্জু বেগম, ভাগিনা জুবায়ের ঢালী, ভাতিজি নাছিমা বেগম, ভাতিজা সাইফুল কাজী।মামলার বিবরণ ও বাদীর ফেনালাপে জানা যায় নিহত কাজী হাবিবুর রহমান (৬০) অবিবাহিত ছিলেন। আসামীদের সংগে জমিজমার বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ ছিল। জানায়ায় গত ২৯ এপ্রিল ভাতিজা সালমান ফরসীসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন হাবিবুর রহমানের বোন আঞ্জুল হক। তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৯ মার্চ জমি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ এনে হাবিবুর রহমান তার ভাতিজা সালমানের বিরুদ্ধে ২০মার্চ আদালতে একটি মামলা করেন। এরপর সালমান ক্ষিপ্ত হয়ে চাচা হাবিবুরকে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় রেশ ধরে ১৭ এপ্রিল পূর্বপরিকল্পিতভাবে হাবিবুরকে বাড়ির সামনে আসামীরা অতর্কিত হামলা করে গামছা দিয়া মুখ বেধে তুলে নিয়ে যায়। এবং শ্বাধরোধ করে মাথায় ডান হাতে, ডান ও বাম পায়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মুড়িয়াজোড়া গ্রামের বজলু গাজী বাড়ির পূর্ব পাশে রাস্তায় ফেলে যায়। পরে পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করে। আঞ্জুল হক জানান দুর্ঘটনা নয়, সম্পত্তির দ্বন্দ্বের কারণে হাবিবুরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার মামলা ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আসামী সালমান ফারসী জানান শরীফ বিশ্বাসের ফোন পেয়ে সংবাদে সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ সাব্বির আমাকে জানালে টেকেরহাট বাসা থেকে গোহালা বাজারে এসে আহত চাচাকে গুরুতর অবস্থায় দেখতে পেয়ে সাব্বির কে মাইক্রো জোগার করে চাচাকে রাজৈর হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মৃত্যুবরণ করলে লাশ নিতে চাইলে রাজৈর পুলিশ বাধা দেয়। পরে মুকসুদপুর থানায় লিখিত দিয়ে তাদের ছাড়পত্রে রাজৈর পুলিশ লাশ আমাদের নিকট হস্তান্তর করলে চাচা হাবিবুরের মরদেহ বাড়িতে দাফন করি। পরে হত্যার অভিযোগে আমার ফুফু আঞ্জুল হক আদালতে মামলা দায়ের করে।
অনুসন্ধান:- কাজী হাবিবুর রহমানের সড়ক দুর্ঘনায় নিহত হওয়ার পরে হত্যা মামলার অভিযোগে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে ঘটনাস্থল পরিদশন, প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের সংগে আলাপে তথ্য সংগ্রহে গত ৭ মে থেকে উপুর্যপরি কয়েক দিন এলাকায় সরেজমিন করা হয়। এসময় প্রত্যক্ষদর্শী অটোযাত্রী খানপুরা গ্রামের এনায়েত কাজী (৪৫) জানান খানপুরা বটতলা থেকে ৪ মন গম নিয়ে অটোতে অন্য যাত্রীর সংগে উঠে পড়ি। গোহালা বাজার থেকে একজন যাত্রী অটোতে উঠে চালকের পাশে বসে। পরে গোহালা বাজার ব্রিজ পার হয়ে মুনিরকান্দির মুখে আরো একজন যাত্রী আটো চালকের ডান পাশে বসে পড়ে। যাত্রী মোটাসোটা হওয়া ও তার ঘুম চোখে এলোমেলো বসায় অটো চালক তাকে নিতে নামিয়ে দিতে চাইলে অনুনয় করে ফের ঠিকঠাক মতো বসতে চেষ্টা করে। পরে মুড়িয়াজোড়া স্থানে বিপরীত দিকে কাঁচামাল ভর্তি অটো আমাদের অটোর সংগে লাগিয়ে দিলে ডান পাশে বসা যাত্রীর হাত আটকে যায় এবং রাস্তায় পড়ে গেলে অটোর পিছনের চাকা তার উপর দিয়ে যায়। পরে সড়কের পাশ্ববর্তী রাজিয়া বেগম, জাহাঙ্গীর, খলিল বিশ্বাসসহ লোকজনের সহায়তায় গোহালায় বিমল ডাক্তারের বাড়ির চেম্বারে নিয়ে যাই। এসময় এলাকার লোকজন আহতের পরিচয় শনাক্ত করে। উপস্থিত গোহালার কমল সহা আহতের বাড়ির পাশের দোকানদার শরীফ বিশ্বাসকে দুর্ঘটনার খবরটি জানিয়ে আহত হাবিবুরের বাড়িতে সংবাদটি পৌছে দিতে বলে। ডাক্তার রোগীর গুরুতর অবস্থা দেখে রাজৈর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। তাৎক্ষণিক অন্য একটি অটোতে রোগীকে রাজৈর নিয়ে যাওয়ার পথে রোগীর স্বজনরা সংবাদ পেয়ে এসে পথিমধ্য থেকে মাইক্রোবাসে তুলে রাজৈর হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাজৈর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার মধ্যেই রোগী কাজী হাবিবুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। এ ব্যাপারে ডা. বিমল শ্বিাস (আরএমপি) বলেন খুব ভোরে ডাকাডাকিতে জেগে অটোতে এ্যক্সিডেন্ট এর রোগী দেখতে পেয়ে সহকারী পঙ্কজকে চেম্বার খুলে দিয়ে তৈরি হতে বলি। রোগীর গুরুতর অবস্থা দেখে বুঝতে পারি আগে রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন ফলে বিলম্ব না করে দ্রুত তাকে এলাকার একটি অটো ভাড়া করে রাজৈর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। এঘটনায় সিন্দিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জালাল জানান ঘটনার দিন অনুমান সকাল ১০টার দিকে ফাঁড়িতে সংবাদ আসে। আইসি সিন্দিয়াঘাটের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যাই, প্রত্যক্ষদর্শী এনায়েত কাজীসহ এলাকার লোকজনের সংগে কথা বলে জানতে পারি অটোর ধাক্কায় আহত হয়ে কাজী হাবিবুর রহমান পরে রাজৈর হাসপাতালে মারা যায়।
মামলার আসামী নিহতের ভাই আতিয়ার রহমান জানান আমরা ১১ভাইবোন এর মধ্যে জীবিত আছি ০৭জন ভাইবোন। সড়ক দুর্ঘনায় নিহত আমাদের সেজ ভাই কাজী হাবিবুর রহমান অবিবাহিত ছিলেন। আমাদের পরিবার মধ্যবিত্ত পরিবার। পৈত্রিক ৬০ কিঘা সম্পত্তির উত্তোরাধিার ভোগদখল নিয়ে পরিবারে কিছুটা বিরোধ অশান্তি ছিল। বাড়ির এক অংশে ঘর তোলা নিয়ে সালমানের সংগে বিরোধ হলে হাবিবুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে পরে থানায় বসে আপোষ মীমাংসা করা হয়।
সড়ক দুর্ঘটনা ও লাশ হস্তান্তর বিষয়ে নিহতের নিকটজন বৃহত্তর পরিবারের সদস্য কাজী হারুন অর রশীদ মিরণ জানান সড়ক দুর্ঘটনায় আমার সম্পর্কে চাচাতো ভাই আহত হন ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে লাশ হস্তান্তরে জটিলতা তৈরি হলে আমি পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সংগে আলাপ করে পরিবারের সকল সদস্যদের অনুরোধে মুকসুদপুর থানা পুলিশকে জানালে বিষয়টি থানা পুলিশ বিবেচনায় নিয়ে তারা ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের অনুমতি দেন।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন গোহালার মুনিরকান্দিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কাজী হাবিবুর রহমান রাজৈর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার স্বজনরা লাশ নিতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবহিত করলে ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তরে আপত্তি জানায় এবং মুকসুদপুর থানাকে অবহিত করে। পরে নিহতের স্বজনরা মুকসুদপুর থানায় এসে জানায় এবং সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ায় কাজী হাবিবুরের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করে। চিরকুমার নিহত হাবিবুরের ভাই ভাতিজাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামত ও উপস্থিতেতে লাশ দাফনের ক্ষেত্রে রাজৈর পুলিশের অনুকূলে ছাড়পত্র দেয়া হয়। পরে স্বজনরা রাজৈর থেকে লাশ গ্রহণ করে নিজ বাড়িতে দাফন করে। দাফনের পরে ২৯ এপ্রিল নিহতের বোন আদালতে হত্যার অভিযোগে মামলা করলে আদালত লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। ৭মে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিহত হওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।



Admin
