বাটিকামারীতে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা ভাংচুর লুটপাট
নিজস্ব প্রতিনিধি: উপজেলার বটিকমারীতে জমিজমা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বিরোধের জেরে বাটিকামারী ইউপি চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বরের নেতৃত্বে জাফর লস্কারের উপর হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৭ জানুয়ারি শনিবার সকালে উপজেলার বাটিকামারীতে এই ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ভুক্তভোগী ও হামলার শিকার জাফর লস্কর (৫৫) কে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। উল্লেখ্য স্বতন্ত্র থেকে বিজয়ী ইউপি চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে এবং বরাবরের মতো জাফর লস্কার উভয় নির্বাচনে আওয়ামী দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন করেন। হামলার শিকার জাফর লস্কর গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, চেযয়ারম্যান আমাকে হলুদ ভিটা বাজার থেকে ডেকে তার সাথে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে আমার ছোট ছেলে সবুজ লস্করকে চোরের বদনাম দিয়ে তাকে হাজির করতে বলেই প্রথমে চেয়ারম্যান আমাকে চড়-থাপ্পর দিতে থাকে। পরে চেয়ারম্যানের ছেলে ও ভাইয়েরা মিলে মোটা লাঠি দিয়ে আমাকে নিষ্ঠুরভাবে পিটাতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে কি হয়েছে জানিনা।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী (শারীরিক প্রতিবন্ধী) জবেদা বেগম বলেন, ২৭ জানুয়ারি শনিবার আনুমানিক ১০ টার দিকে চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বরের ছেলে সাজিদ মাতুব্বর দলবল নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমার ছোট ছেলেকে খুঁজে বের করে দিতে বলে নতুবা তাদের বাড়িতে অচেতন অবস্থায় থাকা আমার স্বামীর চোঁখ উঠিয়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েই আমার বসত ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আমি যেহেতু অসুস্থ আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে আমরা বাড়িঘর ছেড়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে যদি আমরা থানা পুলিশ ও কোট-কাচারী করি তাহলে আমার স্বামী ও দুই সন্তানের চোখ তুলে নেওয়ারও হুমকি দেন তারা। আমরা সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এসেছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে যদি আমাদের এই করুণ পরিণতি হয়। তাহলে আমরা যাব কোথায়? শুধু তাই নয়, সেদিন ইবাদত চেয়ারম্যান এ ঘটনা ঘটিয়ে বিচারের নামে এলাকায় মাইকিং করে তার এই অপকর্মকে আড়াল করার চেষ্টাও চালান তিনি। আমার ছেলে যদি প্রকৃত অর্থে চুরিও করে থাকে তাহলে তার জন্য দেশে আইন- আদালত রয়েছে। চোরের অপবাদ দিয়ে চেয়ারম্যান নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্য নির্যাতন করাসহ আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করতে পারে না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা ইবাদত চেয়ারম্যান সহ জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যমকর্মীদের একটি দল সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে জাফর লস্করের বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুরের আলামত দেখতে পান ও মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে হাসপাতালের বিছানায় তাকে কাতরাতে দেখেন। এদিকে, হামলা ও ভাংচুরের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি কোন ধরনের আইনি ঝুট ঝামেলায় জড়ালে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জাফর লস্কর এবং তার দুই ছেলের চোখ তুলে নেওয়ারও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্বজনেরা। বর্তমানে পরিবারটি নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে চরম আতংকে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাটিকামারি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মনজুর মোর্শেদ জানান জাফর লস্কর একজন আওয়ামী লীগের ত্যাগি কর্মী । গত জাতীয় নির্বাচন ইউনিয়ন নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে নিজেই উদ্যোগী হয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালান। এবারের জাতীয় নির্বাচনে তার প্রচার ঈর্শ্বানিম্বত হয়ে আমাদের প্রতিপক্ষ তাকে চোরের অপবাদ দিয়ে মারপিট করে পুলিশে দিয়েছে। আমরা ইবাদত চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তপন ভক্ত গণমাধ্যমকে জানান, জাফর লস্কর অসুস্থ অবস্থায় আমাদের এখানে ভর্তি রয়েছেন। আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অভিযুক্ত বাটিকামারী ইউপি চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বর বলেন, আমি ২ বারের চেয়ারম্যান। চোর ধরলে পাবলিক মারবেই। ওরা আমার আপনজন কিন্তু চোর। জাফর লস্করের বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে, জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদেরকে খোঁজ নিতে বলেন। এ বিষয়ে মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আশরাফুল আলম জানান, খবর পেয়ে এসআই হাবিবুর রহমান মোল্লা জাফর লস্করকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন। ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।



Admin
