নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে
নিমাই সরকার...
দেখলাম নাও ছাড়িয়ে দেয়ার জোর তাগিদ। ছল ছলিয়ে নাও চলুক। তর সইছে না। দারুন চাপ মাল্লাদের ওপর। পাল তুলে দেয়ার সময় বুঝি এখ্খুনি। এক পর্যায়ে গাজী গাজী বলে ফেটে পড়লেন নাওয়ের মাঝি সরকারের মন্ত্রক মুহাম্মদ ফারুক খান। কেউ দেরি করার সুযোগ পেলেন না।
হ্যাঁ , মুকসুদপুর কলেজ মোড়ের কথা বলছি। সেদিন ছিল আওয়ামী লীগের পঁচাত্তর পূর্তির উদযাপন। প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী। সেখানে তখন অনেক মানুষের ভিড়। সারা প্যান্ডেল টইটুম্বুর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করেন তাঁরা। নৌকায় জয়ের মালা পরিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তখনও অনুসারীরা আসছেন বিশাল এই চত্বরে।
নাও মাঝ দৈরা দিয়া চলুক মাঝ দৈরা দিয়া। সাহসী যৌবনে সুন্দর আগামী নির্মাণে তাদের পেছনে তাকাতে হয় না। তাইতো তেজি হুঙ্কার।
আশরাফ আলী মিয়া মুক্তিযোদ্ধা। “ উড়ালি বিড়ালি বাতাসে নাওয়ের বাদাম নড়ে। তাই বলে তাঁরা কি ভয় করবেন ? বিরুদ্ধ পরিবেশে পদ্মাসেতু বানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঘোষণা ছিল, নিজেদের অর্থে নিজেরাই করবো। পদ্মাসেতু করে ছেড়েছেন। নৌকার মাল্লা আশরাফ জানান, ঢাকার দূরত্ব কমে গেছে।
নাও চলে সামনে। আথালি পাথালি পানি ছলাৎ ছলাৎ করে রে। “ কাশালিয়া ইউনিয়নের নৌকার মাল্লা সিরাজুল ইসলাম তখন দুলছেন বাতাসে। বলেন, যাত্রাপথে চলতে হবে একতালে একলয়ে। সেজন্য চাই হৃদয়ের টানকে আরও বলবান করা।
“ আরে খল খলাইয়া হাইসা উঠে / বৈঠার হাতল চাইয়া হাসে বৈঠার হাতল চাইয়া (হাতে )। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেন উজানী ইউনিয়নের নৌকার মাল্লা শ্যামল কান্তি বোস। তিনি বাংলার হাসিমাখা বদনখানিই সামনে আনলেন। বার্তা দেন, নৌকা ধাবমান বিরুদ্ধ পরিবেশেও।
ঢেউয়ের তালে পাওয়ের ফালে নাওয়ের গলুই কাঁপে/ চির চিরাইয়া নাওয়ের ছৈয়ায় রোইদ তুফান মাপে / মাপে রোইদ তুফান মাপে।
এমন এক ঝলমলে দিনে মানুষকে আনতে হবে বাইরে। উপজেলা আওয়ামীলীগের নৌকার মাল্লা মহিউদ্দিন আহমেদ মুক্ত খবর দেন,” চিরলি বিরলি ফুলে ভ্রমর ভ্রমরি খেলে রে (আরে)। সবার মুখ চিকচিক করে ওঠে।
আওয়ামীলীগ দেশের জন্য লড়েছে। স্বাধীনতা এনেছে। মুকসুদপুর পৌরপিতা আশরাফুল আলম শিমুল এই সংবাদটিই দিলেন তাঁর মতো করে। অভিনন্দন জানালেন দলটিকে।
বাদল উদালি গায়ে পানিতে জমিতে হেলিয়ে / আরে তুর তুরাইয়া আইলো দেওয়া জিলকী হাতে লইয়া /আইলো জিলকী হাতে লইয়া। সত্যিই তাই। বজ্রে আনে আলোর ঝিলিক। এরই মধ্যে পৃথিবীর গায়ে দেখি মুক্তোঝরা হাসি ।
স্বাগত বয়ানে অনুষ্ঠান আয়োজনের সভাপতি রবিউল আলম শিকদার দলের ৭৫ বর্ষের আনন্দ প্রকাশ করলেন। বাড়ির কাছের কথা নয়! সোয়া ছয় যুগের জন্মজয়ন্তী। ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন ভবন থেকে যার আনন্দযাত্রা সেতো গোলাপ ফুল ছড়িয়ে দেবে জনেজনে।
আওয়ামীলীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। জনশক্তি তার পুঁজি।
৭০ এর নির্বাচনের মূল শক্তি ছিল জনগণ। সাধারণ মানুষই মুক্তিযুদ্ধে তার শক্তি সাহস জুগিয়েছে। অনুষ্ঠান সঞ্চালক নৌকার মাল্লা সাহিদুর রহমান টুটুল মুক্তিযুদ্ধের জয়গানই গাইলেন। ৭৫ পরবর্তীতে দক্ষতা যোগ্যতায় এই জনশক্তির বলেই শেখ হাসিনা দাঁড়িয়েছেন। রক্তাক্তভাবেই দাঁড়িয়েছেন।
দেশগঠনে অন্য এক অধ্যায়ের সূচনা। সেও এক অসাধারণ দিক।
ফারুক খান গৌরবের সমাচার দেন। বর্ণিল মুখটি ফিরে ফিরে আসে। পৃথিবীতে পুরোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগও একটি নাম।
ভারতের কংগ্রেস ব্রিটিশ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে মুক্ত করে। জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী পার্টি শ্রমজীবীদের জন্য লড়েছে। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টিও তাই। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাব্লিকান পার্টির জন্ম দাসপ্রথা বিরোধী লড়াইয়ের ব্রত নিয়ে। ফ্রান্সের সোসালিষ্ট পার্টির ছিল ধনি গরিবের সমতা আনার অঙ্গীকার।
নৌকার কাণ্ডারির বুক ফুলে ওঠে। বলেন , আওয়ামী লীগও তার করণীয় কাজটি করে যাচ্ছে। শালি ধানের শ্যামলা বনে হইলদা পঙ্খি ডাকে / চিকমিকাইয়া হাসেরে চান সইশা ক্ষেতের ফাঁকে / সোনালি রূপালি রঙে রাঙা হইল নদী (আরে )। সন্ধ্যার আরও দেরি। পাততাড়ি গুটিয়ে নেয় সবাই। তবে মাল্লারা গোল হয়ে বসেন। তখনও কানে বাজে, নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে। নিমাই সরকার : প্রকৌশলী , কথা সাহিত্যিক।



Admin
