কথা বলার বিষয়টি ভুয়া - রাঘদীতে আলোচিত গাছ কেটেছে প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিনিধি: উপজেলার রাঘদীতে গর্জিনা গ্রামের সৌদি প্রবাসী সবুর মিয়ার গাছের বাগানে একটি গাছ কথা বলে এমন খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে যায় বাতাসে। এলাকাবাসীর ভাষায় ১৪ জুন শুক্রবার তার বাগানের একটি লম্বু (স্থানীয়দের ভাষায়) গাছে গ্রামের নিরব নামে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু গাছটিতে ধারালো দা দিয়ে কোপ দিলে গাছ বলে ওঠে আমাকে মারিস না। পরে এঘটনা পাশের একজন মহিলাকে বললে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে দলে দলে এসে কান পাততে থাকে এলাকার সবাই। তাদেরও একই দাবি, কান পাতলে মেয়ে কন্ঠে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কেউ সালামের উত্তর শুনছেন, আবার কেউ কান্না বা আর্তনাদের আওয়াজ শুনছেন।এমন আশ্চার্য সংবাদ আশপাশের কয়েক এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গাছটি দেখতে ও কথা শুনতে ছুটে আসে উৎসুক জনতা। গাছটিকে পবিত্র আখ্যা দিয়ে গাছের চারপাশ ঘিরে বাশের বেড়া দেয় এলাকাবাসী। কেউ কেউ আবার মানৎ করে গাছের গোড়ায় ফেলতে থাকে টাকা। পরে কয়েকজন স্থানীয় যুবকরা বেড়া ভাঙলে টাকা তোলা বন্ধ হয়। এমন ঘটনার সংবাদ মুখে মুখে ফোনে ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই অলৌকিক গল্পের পিছনে ছুটে আসে অসংখ্য উৎসুক্য মানুষ। কিছু অনলাইন মিডিয়া, ইউটিবার এটিকে সত্য প্রমাণ করে কনটেন্ট প্রচার করে ভিউ বাড়াতে চেস্টা চালায়। লোকজনও চাঞ্চল্যকর এই সংবাদটিকে সত্য ভেবে আসতে থাকেন গর্জিনা গ্রামে গাছটিকে দেখার জন্য। স্থানীয় রাঘদি ইউপি মেম্বার সাদ্দাম হোসেন, রাঘদি গ্রামের লিয়াকত হোসেন, টেকেরহাট সোহেল মাতুব্বর, গর্জিনা গ্রামের ফরিদ মোল্লা সহ আগন্তুক ও কৌতুহলী মানুষ গাছের গায়ে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করেন। শুধু বড়রাই নয়, কথা শোনার চেষ্টা করে শিশুরাও। এতে অনেক দর্শনার্থী গাছের কথা শুনতে পান দাবী করে এটি অলৌকিক ঘটনা বলে মনে করেন। গাছ কথা বলে এমনটি শোনার পর সাধারন মানুষ আসতে শুরু করলে একটি মহল গাছটির চারপাশে বাঁশ দিয়ে বেঁধে দেয়। পরে এটি একটি ব্যবসা উল্লেখ করে সেই বাঁশ ভেঙ্গে দেয় কিছু স্থানীয় যুবক। গাছের গায়ে গোবর লেপার কারনে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলেও দাবী করেন স্থানীয়রা। তবে অনেকেই গাছ কথা বলে একথা অস্বীকার করে এটি জ্বীনের কান্ড হতে পারে বলে জানান। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ বাদশা জানান, এধরনরে ঘটনাকে ইসলাম সমর্থন করে না। তবে জ্বীনকে গাছের মধ্যে আটকে রাখার কারণে এমনটি হয়তো হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত মুলধারার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সবিস্তার সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার সকালে মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মাদ আশরাফুল আলম ও স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান টুটুলের হস্তক্ষেপে গাছটি কেটে ফেলা হয়। এতে পরিসমাপ্তি ঘটে কথা বলা গাছের অলৌকিক গল্প। যদিও গাছকাটার সময় কৌতহলী জনতার অভাব ঘটেনি, গাছটি কাটার পরও দেখতে ও গাছের কথা শুনতে দূরান্ত থেকে চুপিচাপি আসছেন মানুষ।
এখন স্থানীয়রা বলছেন গাছে কান পাতলে কথা শোনার বিষয়টি ছিল গুজব। তবে কান পাতলে গাছের ভিতর থেকে শব্দ শোনা যেতো। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বলছে গাছ থেকে কথা শোনার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কেন গাছ থেকে নারীকণ্ঠ শুনতে পাচ্ছেন অনেকেই ?- এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে মনোবিজ্ঞানে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক নাহমিনা বেগম জানান, গাছে কান পাতলে কথা শোনা যায় এটার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নাই। তবে গাছের একটি শক্ত নেটওয়ার্ক রুট রয়েছে। যা অনেকদুর নিয়ে বিস্তৃত। এর মাধ্যমে এক গাছ আরেক গাছ কে উপকার করে থাকে। তবে গাছে কান পাতলে কথা শোনার বিষয়টি সম্পুর্নই কুসংস্কার বলে দাবি তার। এ ঘটনায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনো বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত শারমিন জানান, এটি প্যারিডোলিয়া হতে পারে। প্যারাডোলিয়া এমন মনস্তাত্ত্বিক রোগ যা, কোনো এলোমেলো উদ্দীপককে অর্থবহু করে তুলতে পছন্দ করায় এছাড়াও মানুষের মাছহিস্ট্রেরিয়া থেকেও মানুষ এমন কুসংস্কার ছড়িয়ে দিতে পারে। গোপালগঞ্জ সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক শুকলাল বিশ্বাস জানান, গাছের প্রান আছে এটি সত্যি। তবে এটি চলাচল করতে যেমন পারেনা, তেমনি এর কোন ভোকাল নাই বা বথা বলতেও পারেনা। এটিকে তিনি গুজব বলে আখ্যা দেন। কেননা কথা বলার বিষয়টি বিজ্ঞান সমর্থন করেনা
এদিকে মুকসুদপুর থানার ওসি মোহাম্মাদ আশরাফুল আলম ও রাঘদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান টুটুল বলেন, গাছে কথা শোনা যায় বিষয়টি গুজব। আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর আমরা ওই এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে দেখি। বিষয়টি আমাদের কাছে ভুয়া মনে হয়েছে। এছাড়াও আমরা কান পেতে দেখেছি। কোন কথা শোনা যায় না। পরে আমরা গাছটি কেটে ফেলি। স্বার্থান্বেসী কোন মহল ব্যবসা বাগাতে যাতে না পরে এবং সাধারন মানুষ যাতে প্রতারনার শিকার না হন ভবিষ্যতে সে বিষয়ে প্রশাসন আগেভাগেই অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। গুজবকে সত্যি বলে প্রচারের চেষ্টা চালালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



Admin
