গ্রীষ্মের তাপদাহ বিপর্যস্ত জনজীবন - জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবের ঝুঁকিতে দেশ
বৈশাখের শুরুতেই গ্রীষ্ম মৌসুমের তাপদাহ ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধিতে বিগত দিনের রেকর্ড ভেংগে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পার হয়ে পারদের গতি ঊর্ধে ধাবমান। আবহওয়া বিভাগ ইতোমধ্যে সপ্তাহের ‘হিট এ্যালার্ট’ জারি করে পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে তাপপ্রবাহের আভাষ দিয়েছে। সরকার-শিক্ষা বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জরুরিভাবে স্কুল কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সব থেকে কষ্ট ভোগ করছে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ, সড়কসহ উন্মুক্ত কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী, স্বেচ্ছসেবীরাও দুর্ভোগের শিকার। ব্যক্তি-পরিবারে আর্থিক সংগতিতে ঊচ্চ বিত্তের কথা ভিন্ন হলেও মধ্যবিত্তরাও পরিস্থিতির চাপে জীবন বাঁচাতে শীতলীকরণ যন্ত্রের খোঁজে ছুটছেন। বলাভাল সাধারণের যাপিত জীবন অনেকটাই ওষ্ঠাগত,পশু-পাখিসহ প্রাণিকূলও দুর্ভোগে রয়েছে। তীব্র তাপদাহের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা নানাবিধ জ্বরসহ আকস্মিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলো এসব রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। প্রতিদিনের গণমাধ্যমে তাপদাহজনিত সংবাদচিত্র প্রকাশ পাচ্ছে ব্যাপক আশঙ্কায়।
বিগত কয়েক বৎসরের রেকর্ড পর্যক্ষেণে দেখা গেছে আবহাওয়ার গুণগত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। শীতের সময় প্রচণ্ড শীত, গরমের সময় অধিক গরম। আকস্মিক অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি অত্যধিক মাত্রায় বজ্রপাত, ঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের স্বভাব বৈশিষ্ট্যের প্রকৃতি থেকে আমাদেরকে বিদায় জানাচ্ছে। ক্রমেই আমরা বিপর্যয়কর পরিবেশের দিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি। জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় পরিবেশবাদী আন্দোলন-ক্যাম্পেইন হলেও সরকার ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ব সংস্থা গৃহীত প্রকল্পের উদ্যোগ কার্যকর করতে পারেনি। আইলার মতো ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত সুন্দরবন চোখে আঙুল দিয়ে ভয়াবহতা দেখিয়ে দিয়েছে। নগর সভ্যতায় ইট-পাথরের জঞ্জাল নির্মাণের পাশাপাশি অবাধে বন-বৃক্ষ ধ্বংস, প্রাকৃতিক জলাধার ভরাটকরণ, কাঠ পুড়িয়ে ইটভাটা, ক্যামিকেল-রাসায়নিক কারখানার বর্জ্যসহ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ, গ্রীণহাউস এফেক্ট- মিথেন গ্যাস নিঃসরণ বায়ু-ওজনস্তরে ফাটলসহ নানাবিধ কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এর প্রভাব উত্তর মেরুর বরফ গলার মাত্রা, নিকটবর্তী হিমালয়ের বরফও আশঙ্কাজনক মাত্রায় গলছে, বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যৎবাণীসহ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এভাবে সঞ্চিত বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্ছতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ভূভাগের উপকূলবতী এলাকার অনেকাংশই সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবজনিত এই বিরূপ পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল গঠনসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনায় কর্মোউদ্যোগ গৃহীত হলেও ধনিক-মোড়ল দেশগুলি কার্বন নিঃসরণে চুক্তিবদ্ধ না হয়ে অনাগ্রহ, তৎপরতাহীনতায় সফলতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। উপরন্তু নিউক্লিয়ার এনার্জি, পরমানু শক্তি ব্যবহার নিরাপদ করাসহ পরমানু সমরাস্ত্র দুঘর্টনা-পরীক্ষাজনিত বিকিরণ মাত্রা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উদ্যোগ নেই। দরিদ্র-উন্নয়নশীল দেশসমুহ ভূক্তভোগী মাত্র, কার্যত সব তৎপরতা উন্নতদের, এবং তাদের জন্যই; বরাবরই তাদের ভূমিকা তদারকিতে ব্যাপ্ত।
প্রতিদিনের তাপ-চাপ, আদ্রতা-জলীয়বাষ্প, বৃষ্টিপাতসহ বায়ুমণ্ডলের ইত্যাদির উপাত্তসমূহের সপ্তাহের গড়কে যেমন আবহাওয়া বুঝায় তেমনি একযুগ কাল কিংবা ৩০-৩৫ বৎসরের আবহাওয়ার গড়অবস্থাকে জলবায়ূ বুঝায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়-পূর্বাঞ্চলীয় জলবাযু নিয়ন্ত্রিত হয় সুবিস্তৃত প্রশান্ত মহসাগরীয় বলয় প্রভাবে। অঞ্চলের প্রভাবাধীন জলবায়ুর বৈশিষ্ট চিহ্নিত করতে এল-নিনো, লা-নিনা বৈশিষ্ট্যে বিশ্লেষণ করে থাকেন। প্রশান্ত মহাসাগরের অভ্যন্তরে বিপুল গভীরতায় ভূ-আন্দোলন-গিরিখাতে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, লাভা নিঃসরণ, সুনামীসহ নানা কারণে জলরাশির তাপমাত্রা পরিবর্তনে অশান্ত হয়ে উঠেছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে উষ্ণ পানির প্রবাহজনিত এল-নিনো, শীত মৌসুমে তেমনি লা-নিনার কার্যকারণ বায়ুমণ্ডলে যার বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রকৃতির এই ভারসাম্য বিনষ্টের কারণে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ গোলার্ধের অনেক দেশসহ আমরা গভীর উদ্বেগে ভূক্তভোগী। আমরা চাই আন্তর্জাতিক গরেষণা-মূল্যায়ণ কৌশল পত্রের সংগে বাংলাদেশ বাস্তবসম্মত উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আজ মহান মে দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস। তাবৎ পৃথিবীর শ্রমজীবি মানুষের মুক্তি সংগ্রামের সাথে সংহতি প্রকাশের দিন। ১৮৮৬সালের এই দিনে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিক আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতি বিজড়িত এই দিবসটির তাৎপর্য সারা দুনিয়ার শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ের স¥ারক হয়ে আছে। শুধু শ্রমিকের অধিকার আদায় নয়, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের বিপ্লবী প্রেরণা। এ আন্দোলনে মহান শ্রমিকের আত্নাহুতি এসব অমানবিক ব্যবস্থার উচ্ছেদ করে ব্যাপক শ্রমিক ও মানবাধিকার আদায়ের সংগ্রামী সংগঠনের জন্ম দেয়। মে দিবস মানব সভ্যতার অগ্রগতির স্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে মানবতার জয়যাত্রাকে করেছে মহিমান্নিত। এদিনের আদর্শের সাথে যুক্ত হয়েছে শ্রমিক শ্রেণির মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো। মে দিবস শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের আবহমান সংগ্রামী ধারার প্রতীক হয়ে জাগরুক থাকবে অনন্ত কাল বিপ্লবী উচ্চারণের মাত্রায় -দুনিয়ার মজদুর এক হও’। মহান মে দিবসে শ্রমিক কৃষক মেহনতি সকলকে আমাদের সালাম শুভেচ্ছা; ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক’।



Admin
