স্মার্ট শিক্ষার মাধ্যমে জনবল তৈরি করতে হবে
মো. নজরুল ইসলাম খান......
দেশের প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের কাছে অনেক কিছু চাওয়ার আছে। সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চায়, তার জন্য প্রথমে স্মার্ট শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার পরিবেশ, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্মার্ট করে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু ভবন বা পরিবহন ব্যবস্থা স্মার্ট করলে তো বাংলাদেশ স্মার্ট হবে না।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বপ্রথম শিক্ষকদের প্রশিক্ষণব্যবস্থা বাড়ানোর বিষয়ে নজর দিতে হবে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বা পিটিআই যেগুলো আছে, সেখানে নতুন কোর্স ডিজাইন যুক্ত করা প্রয়োজন। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য সর্বপ্রথম পদক্ষেপ হতে পারে সরকারীকরণ প্রক্রিয়া।
প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারীকরণ করতে হবে। এ ছাড়া এই স্তরের শিক্ষকদের জন্য ‘লিডার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ থাকা প্রয়োজন, যেখানে প্রধান শিক্ষকদের আলাদাভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সরকারের কাছে অন্যতম একটি চাওয়া হলো সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে প্রতিটি ক্লাসরুম স্মার্ট হতে হবে।
প্রতিটি ক্লাসে স্মার্ট বোর্ড সংযুক্ত থাকতে হবে। বিনা মূল্যের পাঠ্যবইগুলো অনলাইনে ই-বুক আকারে দিতে হবে, যেন পাঠ্যবইয়ে কোনো ভুল-ভ্রান্তি না থাকে, আবার ভুল থাকলেও যেন দুই মিনিটেই তা সংশোধন করা যায়।
দেশের কারিগরি শিক্ষাকে ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে হলে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট করা প্রয়োজন। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশদভাবে শিক্ষা দেওয়া। যেমন আমের দেশ চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি আমের মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা আম বিষয়ে বিশদভাবে পড়াশোনা করতে পারে। কোথাও কৃষি, আবার কোথাও টিস্যু কালচার নিয়ে এমনভাবে প্রতিটি উপজেলায় বিশেষায়িত এসব মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঁচতারা মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গবেষণা খাত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ধরনের গবেষণা করবে তা নিয়ে সরকার থেকে গাইডলাইন তৈরি করে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগ গবেষণা অন্য দেশের অর্থায়নে বা তাদের চাহিদা অনুযায়ী হয়ে থাকে। এমনটি হলে আমরা কিভাবে এগিয়ে যাব? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই দেশের স্বার্থে ও সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী গবেষণা করতে হবে।
আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে যে অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থ গবেষণা উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে না। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভবন উন্নয়নের অর্থ গবেষণায় ব্যবহার করা যায়, কারণ দুটিই উন্নয়ন খাত। ধরুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক মাইল লম্বা সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেয়ালের বাউন্ডারির (সীমানাপ্রাচীর) পরিবর্তে গাছ দিয়ে গ্রিন বাউন্ডারি দেওয়া যেত। এই অর্থ দিয়ে প্রতিটি ক্লাসে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিশ্চিত করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো।#লেখক: মো.নজরুল ইসলাম খান সাবেক শিক্ষাসচিব।



Admin
