উপজেলা সদরে নিত্য সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব - সকল কর্তৃপক্ষের ॥ কারো অবহেলা কাম্য নয়

উপজেলা সদরে নিত্য সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব - সকল কর্তৃপক্ষের ॥ কারো অবহেলা কাম্য নয়

মুকসুদপুর সংবাদ পৌরসভার উন্নয়ন ফিরিস্তি প্রকাশের সংগে উপজেলা সদর বা পৌরসদর-বাজার এলাকায় নিত্যদিনের চলাচলসহ বিরাজিত বিভিন্ন সমস্যাবলী নিয়ে যেমন যানজট ও ড্রেনেজ নির্মাণ প্রসঙ্গে সমকালীন উন্নয়ন অসঙ্গতি চিহ্নিত করে পরপর দু’টি ধারাবাহিক সংবাদ-প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ প্রতিবেদনে বর্ণিত বিবরণ অসম্পূর্ণ হতে পারে কিন্তু বিষয় অসত্য নয়। উপজেলা সদরের আমজনতা এই সমস্যায় ভোগান্তি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। এসব সমস্য নিরসনের উদ্যোগ নিলেও গৃহীত প্রকল্প পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকায় উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা এর অন্যতম উদাহরণ। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প গৃহীত ও বাস্তবায়ন হলেও কাজে আসছে না। মূলসড়ক থেকে এর উচ্চতা বেশী হওয়ায় সড়ক পরিসরকে ছোট করেছে। ধরে নেয়া যায় যে অদূর ভবিষ্যতে কার্পেটিং বাড়তে বাড়তে একসময় সড়ক ড্রেন-বক্স সমান উচ্চতায় যাবে। কিন্তু সেতো অনেক দূর! নির্মাণ কর্তৃপক্ষ ভিন্ন বলেই এই সমন্বয়হীনতায় খাপছাড়া উন্নয়ন।

যানজট নিরসনে সড়ক প্রশস্তকরণ ও সড়ক দখল বিষয়ে সমস্যা দীর্ঘ দিনের। মাননীয় সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি এসম্পর্কে সম্যক অবগত। ২০২১ সালে নিজ বাড়িতে নেতা-কর্মীদের সংগে মতবিনিময়ের ঘরোয়া বৈঠকে এই সমস্যার প্রসঙ্গ তুলে নিরসনের উদ্যোগের কথা বলেন। তাঁর মতামত ভিত্তি করে ১ অক্টোবর ‘উন্নত মুকসুদপুর শহর এখন সময়ের ব্যাপার: ফারুক খান’ শিরোনামে সংবাদ ও ১৬ অক্টোবর ‘উন্নত মুকসুদপুর শহর এখন সময়ের দাবি’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। কিন্তু যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা অদ্যাবধি গৃহীত হয়নি। আমরা স্বীকার করছি সড়ক প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা, উপজেলা পরিষদ এর মতো সরকারী কর্তৃপক্ষ স্থাপনা-বাউন্ডরী ওয়াল সরিয়ে নতুন করে নির্মাণ করছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ বা ক্রয় করার বিষয়টিও মাননীয় নেতা উল্লেখ করেছেন। তবে অনেকটা দিন গড়ালেও সমস্যার সুরাহা হয়নি বরং বেড়েছে এবং ক্রমাগত বাড়ছে। মুকসুদপুর সদর বাজারে নানাকারণে লোক সমাগম অত্যধিক। দূরান্ত থেকে যারা বাহনযোগে বিশেষ করে অটো-রিক্সা-ভ্যান বিভিন্ন সড়ক দিয়ে প্রবেশ করে, তারা স্টান্ড করবে কোথায়। সড়ক ছাড়া কোথাও সূচ ফেলার জায়গা নেই। বলা যায় নিরূপায় হয়েই সড়ককে স্টান্ড বানানো হয়েছে। ফলে দিনরাতের অধিকাংশ সময় বাস ট্রাক লরি ক্যাবার্ডভ্যান, প্রাইভেটকার, মাইক্রো, এ্যাম্বুলেন্সসহ নসিমন- করিমন- ভটভটি এবং অটোভ্যান, রিক্সাভ্যান, মটরসাইকেল চলাচলে যাত্রী-পথচারী চলাচলে এক অভাবনীয় দুর্দশার চিত্র প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ হচ্ছে। এই সমস্যা নিরসন শুধু জরুরি নয়, অতিজরুরি। বরইতলা-মুকসুদপুর-ভাটিয়াপাড়া বাইপাস সড়ক স্থানান্তর বা বিকল্প রুট নির্মাণ করা হলে বাস-পরিবহনজনিত ব্যস্ততা কিছুটা কমবে, কিন্তু স্থানীয় যানবাহন চাপ বাড়বে বৈ কমবে না। ফলে সড়কে অটো-রিক্সা ভ্যান এর স্টান্ড সরানো প্রধান সমস্যা; নামে ফুটপাত না হোক মূল সড়কে দোকান পাট বন্ধ করতেই হবে। বিগত দিনের মতো আজ সরালে পরদিন ফের দোকানÑ এমনটা করলে চলবে না। মোদ্দা কথা সমস্য নিরসনে মাস্টার প্লান গ্রহণের বিকল্প  নেই।

আমরা মনে করি এতকিছুর পরেও সমাধানের পথ আছে। শুধু পৌরসভা কিংবা উপজেলা পরিষদ বা অন্যকোন বিভাগের অধীন কর্তৃপক্ষকে ব্যর্থতা বা অবহেলার জন্য এককভাবে দায়ী করা উচিৎ নয়। কিন্তু আমরা প্রত্যাশা করি বাংলাদেশ সরকারের অধীন সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ-কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে আলোচনা ও বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। এই মুহূর্তে নির্বাচন সামনে থাকায় আর কোন প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ নেই তবে পরবর্তী সরকার যেই আসীন হন, মাননীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে আমাদের জোর দাবি ও একমাত্র দাবি হবে   পৌরসভা বা উপজেলা সদর যাই বলিÑ এর যানজট নিরসন, বাজার-চান্দিনার উন্নয়ন ও সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্নিত করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিবেন। উন্নয়ন আধুনিকতার বিকেন্দ্রীকরণ হলেও কেন্দ্র অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে, ইউনিয়ন উন্নয়ন তুলনায় সদর প্রাধিকার যোগ্য। কেননা সদর বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী, বেসরকারী, ব্যাংক-বীমার আর্থিক প্রতিষ্ঠান; স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সমূহে সেবা গ্রহণ ও হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ-চলাচলে উপজেলার সকল ইউনিয়ন থেকে আগত  রোগী ও প্রত্যন্ত এলাকার অসংখ্য জনগণের নিত্যদিনের নির্বিঘœ নিরাপদ চলাচল করতে সড়ক প্রস্তকরণ ও আধুনিকায়নে উপযুক্ত প্রকল্প গ্রহণ আবশ্যক। এই দাবি এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ, অন্যতম জনদাবি। প্রত্যাশা করি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনিক কর্র্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।