শোকাবহ পনেরই আগস্ট জাতীয় শোকদিবস -নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিতকরণে কমিশন গঠন চাই
পনেরই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্ট প্রত্যূষে রাজধানীর ধানম-ির বত্রিশ নম্বরের নিজ বাড়ীতে রাষ্ট্রপতি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের উপ¯ি'ত অন্যান্য সদস্যসহ সপরিবারে সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের ক্যু’র নামে ঘাতক সদস্যদের হাতে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন। একই সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিবার আতœীয় স্বজন ও দলীয় নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অনুরূপ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে প্রবাসে অব¯'ান করায় প্রাণে বেঁচে যান। ঘাতকরা আধুনিক মারনাস্ত্র নিয়ে নারী শিশুসহ ছাব্বিশ জনকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। এই হত্যাকা- ছিল সেনাবাহিনীর ক্যু’র নামে ক্ষমতা দখলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লের গভীর ষড়যন্ত্র, লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে খোলনলচে বদলে ফেলা। কারান্তরীণ জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামানকে ৩ নভেম্বর হত্যা করার ঘটনায় ঘাতক-সহযোগীদের নীলনক্সা নগ্নভাবে প্রকাশ পায়। আমরা মনে করি মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের পরাজয় প্রতিশোধের বদলা নিতেই এই হত্যাকা-। ক্ষমতা দখলকারীরা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ চেতনাশূন্য করতে উল্টো পথে চালিত করে। জাতিরজনক দেশ গড়ার অংশ হিসেবে রাজনৈতিক সংস্কারে নিজদল পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ-বাকশাল-এ উন্নীত করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ করে ছিলেন। লক্ষ্য ছিল স্বনির্ভর, স্বয়ম্ভর স্বদেশ নির্মাণ। বলাবাহুল্য তিনি পুঁজিবাদী অর্থনীতির লাগাম টানতে চেয়েছিলেন। কার্যত তাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখলই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মূল লক্ষ্য।
ক্ষমতা চির¯'ায়ী পাকাপোক্ত করতে খুনীদের দায়মুক্তি দিয়ে ক্ষমতাদখলকারী মোস্তাকের অবৈধ সরকারের জারী করা ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জেনারেল জিয়া জাতীয় সংসদে পাশ করে খাতকদের বাঁচিয়ে দেশে বিদেশে বিভিন্ন সুযোগ সবিধায় চাকরিতে নিয়োগ দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বদেশে ফিরে দীর্ঘ একুশ বৎসর বৈরি সময় লড়াই সংগ্রামের মধ্যে অতিবাহিত করে ক্ষমতায় এসে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যাান্স বাতিল করে পনেরই আগষ্টের হত্যাকা-ে জাতিরজনক ও পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী খুনীদের আইনের আওতায় এনে বিচার সম্পন্ন করেন। সর্বো"চ আদালতের প্রক্রিয়া শেষে হত্যাকা-ের বিচারে কতিপয় আসামীদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর হয়েছে, এখনো অনেক খুনী বিদেশে পলাতক। সরকার-প্রশাসন বলে আসছেন পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে অনবেন, কিš' দীর্ঘদিনেও সে প্রচেষ্টার অগ্রগতি নেই। আমরা চাই তাদেরকে যেকোন মূল্যে ফিরিয়ে আনা হোক। পনেরই আগষ্ট হত্যাকা- সংঘটনে নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হত্যাকা-ের বিচার-রায়ে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়ে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিš' দশক পার হলেও কমিশন গঠনে সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, শুধুমাত্র পনেরই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে যা"েছন। এবার স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন কমিশন গঠনের নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, অচিরেই প্রক্রিয়া চালু হবে। আমরা আশ্বস্ত হতে চাই, অবশ্যই সরকার গুরুত্ব দেবেন।
পচাত্তরের পনেরই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-, ৩ নভেম্বরে জাতীয় চার নেতার জেল হত্যাকা-সহ শোকদিবস গভীর সংহত আবেগে পালিত হয়ে আসছে দলীয় আয়োজনে শোক সভায়। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন-পরিচালনায় থাকায় রাষ্ট্রিয় কর্মসূচির প্রাধান্য থাকলেও শোক দিবসের দ্রোহীচেতনার বিপরীতে অনুষ্ঠানাদি ব্যানার-ফেস্টুন, বাণীতে গতানুগতিকতায় পর্যবসিত রূপ পা"েছ যা ভাবগম্ভীর মর্যাদাপূর্ণ নয়। আমরা চাই দলীয় আয়োজনে রাজনৈতিক পরিসরে শোকদিবস পালিত হবে নেতাকর্মী ও আমজনতার নিবেদিত অংশগ্রহণে। শোক দিবসের গভীর তাৎপর্য অনুধাবনে আওয়ামী লীগ, সম আদর্শে রাজনৈতিক-সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় উজ্জীবিত জনতার কাছে আমাদের নিবেদিত প্রত্যাশা।



Admin
