দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সংকট - উত্তরণে সংলাপ সমঝোতার বিবল্প নেই
বর্তমান ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে চৌদ্দ দলীয় জোট সরকারের মেয়াদ পূর্তির বৎসর শেষে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে নির্বাচন জয়ে সরকার ও বিরোধী রাজনীতির শিবিরে রাজপথের লড়াইয়ে ড্রেস রিহার্সেল শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিরোধী শিবির বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে জোটসহ রাজনৈতিক দলগুলি সরকার পতনের লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ‘যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের’ একদফা দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে। কার্যত রাজনীতি ক্ষমতার মসনদ কেন্দ্রিক নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার লড়াইয়ে পর্যবসিত।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্নে গৃহীত গণতান্ত্রিক আদর্শকে অন্যতম মৌলনীতি হিসেবে যুক্ত করে ভবিষ্যৎ নির্মাণের সূচনা করে বটে তবে এর প্রাতিষ্ঠানিকতা বরাবরই ভঙ্গুর রয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক দর্শন-মূল্যবোধ কার্যত অপুষ্ট নিয়ন্ত্রণহীন এবং উপযুক্ত সহযোগী হিসেবে পুঁজিবাদী-ভোগবাদী, মুক্তবাজার অর্থনীতির সহযোগে নৈরাজ্যের চাষবাদ সর্বক্ষেত্রে জাতীয় স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে কর্পোরেট শতবাহুর শক্তিতে সমাজ সংস্কৃতির খোল নলচে পর্যন্ত ক্রমাগত পরিবর্তনে কলকাঠি নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজনীতি কার্যত পক্ষ-বিপক্ষসহ সকল শিবিরে আস্থার সঙ্কটে স্থিতিশীলতার বিপরীতে গড়ে উঠেছে পরনির্ভলশী পরগাছার বীজ দেশে এবং বিদেশের উর্বর ভূমিতে। নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত অনুষ্ঠিত হবে; নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাতœকভাবে কঠোর ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে এমনটা প্রত্যাশা সবার। বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক জোট ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মী দাবি করে আসছেন সাম্প্রতিক নির্বাচন সমূহে নানাভাবে কারসাজি, জালিয়াতি করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জয়লাভ করে সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে এবং নির্বাচন কমিশন তাদের সর্বোতভাবে সহায়তা করেছে। এ কারণে সরকারকে অবৈধ, ভোট ডাকাতির সরকার দাবি করে পুনরায় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শর্তপুরণ না হলে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন না এবং নির্বাচন প্রতিহত করবেন। অপরদিকে সরকার পক্ষ তাদের রুখে দিতে রাজনৈতিক মোকাবেলায় মাঠে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সবারই দাবি ক্ষমতায় যাওয়ার ‘এক দফা’। বলাবাহুল্য বর্তমানকালে কোন দেশের জাতীয় নির্বাচন জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টতায় প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়, মোড়লদের তরফে নানাবিধ মাধ্যম উপায়-পদ্ধতির নিষেধঅজ্ঞা কৌশল ‘ট্রামকার্ডে’র চাল দিয়ে। নির্বচন সামনে রেখে বিদেশি মিশন-রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক পরিম-ল কর্মকর্তাদের সফর দেনদরবার তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমান। রাজনৈতিক দলগুলির পরনির্ভরশীলতা দৃষ্টিকটূ হলেও রাজনীতিকবৃন্দ আতœসম্মানের বিষয়টি উপেক্ষা করে আসছেন বরাবর। রাজনৈতিক সংকট মোচনে সংলাপ সমঝোতা বিকল্পহীন হলেও বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত সংলাপপর্ব ফলপ্রসু হয়নি ‘তালগাছটি আমার’ জাতীয় মনোবৃত্তির জন্য। এমনকি নব্বই দশকে আন্দোলনের ঐতিহাসিক স্মারক ‘তিন জোটের রূপরেখা’র চুক্তি পর্যন্ত অবহেলা করা হয়েছে, হচ্ছে। রাজনৈতিক সংকট মোচনে প্রয়োজন কেবলমাত্র সদিচ্ছার সমঝোতা, আন্তরিক ও খোলামনের আলোচনায় দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব। কুরুক্ষেত্র ক্যাচাল পরিহার করে কতদিনে আমাদের রাজনীতিকবৃন্দ যোগ্য নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবেন। প্রত্যাশা করি তাদের সুমতি হোক।



Admin
