দুই শতাধিক তরুণ জীবন-সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব - মানব পাচারের গডফাদার বিশু ম-লের খপ্পরে জিম্মি দেড়শতাধিক
বিশেষ প্রতিনিধি: মানব পাচারের গডফাদার বিশু ম-লের খপ্পরে এলাকার শতাধিক তরুণ জীবন-সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব। নিহদের পরিবারে শোকের মাতমসহ ভূক্তভোগীদের ঘরে ঘরে চলছে বিলাপ আহাজারী। বিপরীতে শীর্ষ মানবপাচারকারী বিশু ম-লের গড়ে উঠেছে অঢেল সম্পদের পাহাড়। বিশু ম-লের বাড়ী মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের বাঘাদিয়া গ্রামে। প্রশাসনের চোখের সামনে দীর্ঘদিন অবৈধ মানবপাচার করে আসলেও প্রতিকার না মেলায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে বিশু ম-ল। সম্প্রতি ইতালির পথে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়ার উপকূলে ট্রলার ডুবিতে উপজেলার তিন হতভাগ্য যুবকের করুণ মৃত্যু হলে আলোচনায় উঠে এসেছে মানব পাচারকারী বিশু ম-লের কুকীর্তি।
জানা গেছে উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামের তরুণদের ইউরোপ এর দেশ ইতালিতে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এসব তরুণদের টার্গেট করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে চিহ্নিত মানব পাচারকারী চক্র। বাংলাদেশ-ভারত, লিবিয়া, তিউনিশিয়ায় এ চক্রের সদস্যরা ভুয়া ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি দেখিয়ে তরুণদের কৌশলে ফাঁদে ফেলে। প্রথমে দেশে কয়েক দফা তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। পরে তাদের পাঠানো হয় ভারত। বলা হয়, সেখান থেকে তাদের ইউরোপ পাঠানো হবে। এরপর সেখানেও ধাপে ধাপে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে হোটেল রুমে জিম্মি করে রাখা হয়। টাকা না দিলে নেমে আসে নির্যাতন। পরে তাদের সেখান থেকে নেয়া হয় লিবিয়া ও তিউনিয়াশিয়ায়। সেখানে আটকে রেখে ধাপে ধাপে নেয়া হয় টাকা। নিজেদের ভাড়া করা মাফিয়া চক্র দিয়ে তুলে নিয়ে রাখা হয় গভীর জঙ্গলে। সেখানে আটকে রেখে করা হয় অমানবিক নির্যাতন। সেই নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ বানিয়ে পাঠানো হয় পরিবারের কাছে। সেখান থেকে ছাড়াতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় পাচারকারী চক্র। এ চক্রের দেওয়া জাল ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট, আর্থিক লেনদেন, চুক্তিপত্র ও অডিও কথোপকথনসহ বিভিন্ন তথ্য আছে মুকসুদপুর সংবাদের কাছে।
এসব কর্মকা-ে শীর্ষ মানব পাচারকারী চক্রের হোতা উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের বাঘাদিয়া গ্রামের বিশু ম-ল। বাংলাদেশ-ভারত, লিবিয়া এবং তিউনিশিয়ায় রয়েছে তার বড় গ্যাং। বিশু ম-ল বাঘাদিয়া গ্রামের রমেশ ম-লের ছেলে। পঁয়ত্রিশ বৎসরের যুবক বিশু ম-ল শিক্ষায় স্কুলের গ-ি না পেরুলেও প্রতারণা বুদ্ধির কলা-কৌশল যোগ্যতায় সে অনেকের তুলনায় সেরা। এই মুহূর্তে তার প্রতারণার শিকার হয়েছে মুকসুদপুর, ভাঙ্গা, রাজৈর এলাকার ১শ ৫০ জন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই দিয়েছে বিশুর হাতে ১৩ থেকে ১৭ লাখ টাকা। কেউ ১ বছর, কেউ ৬ মাস আবার কেউ ৩ মাস ধরে আটকা আছে লিবিয়া এবং তিউনিশিয়ার ‘গেম’ ঘরে। এরই মধ্যে ইতালিতে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছে কয়েকজন। এতো কিছুর তোয়াক্কা না করে অবৈধ অফিস নিয়ে দেদারছে মানবপাচার ব্যবসা নির্বিগ্নে চালিয়ে যাচ্ছে বিশু ম-ল।
২০২৩ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখে বাঘাদিয়া গ্রামের রওশন শিকদারের ছেলে মিরন শিকদার পরিবারে স্ব"ছলতা ফেরানোর উদ্দেশ্যে বিশুর মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন। মিরন শিকদারের স্ত্রী মিতা মজুমদার জানান, বিশু মন্ডলের সাথে ১৪ লাখ টাকা চুক্তি করে আমার স্বামীকে বিদেশে পাঠাই। পরে সে আমার স্বামীকে লিবিয়ায় আলী নামক এক মাফিয়ার কাছে আটকে রাখে। সেখান থেকে ছাড়ানোর জন্য আমার কাছ থেকে আরও ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়। ছাড়িয়ে এনে প্রায় ৬ মাস যাবত আমার স্বামীর কোন খবর নেই। তার সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। বিশু মন্ডলের কাছে গেলে সে আমাদের অপমান অপদস্ত এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে। এঘটনায় ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে মুকসুদপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। এছাড়াও ডিবির প্রধান কার্যালয়, র্যাব প্রধান কার্যালয়, ডিআজি অফিস, গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এর কার্যালয়ে বিশু মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি বিশু মন্ডলের দ"ষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি।
বাঘাদিয়া গ্রামে এই বিশু ম-লের রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক দালাল। বাঘাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন গড়ে তুলেছে মানব পাচার অফিস। কম্পিউটার প্রিন্টার ব্যবহার করে আধুনিক ডিজিটালাইজড অফিস গড়েছে সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য। অফিসের নিচ তলায় কথিত অফিসিয়াল কার্যক্রম চলে। দোতলায় রয়েছে তার ব্যক্তিগত কক্ষ। সেখানে কোন ধরনের লোকের প্রবেশ নিষেধ। নিয়মিত বসে গভীর রাত পর্যন্ত মাদকসেবন, নারী সম্ভোগের আসর। নিচে থাকা তার দালাল চক্র পার্টিকে সামলান। টাকা লেনেদেনের সময় তিনি নিচে নামেন। এখানকার স্থানীয় প্রভাবশালী আর মাদক কারবারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে লাঠিয়াল বাহিনী। যে সকল ভূক্তভোগীরা তাদের আপনজনদের ইতালিতে পাঠানোর জন্য টাকা দিয়েছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা আটকা রয়েছে, তাদের স্বজনরা এখানে এসে বাকবিতন্ডা করলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি এবং মারধর করে তাড়ানো হয়। বিশু ম-লের মূল দালাল ও সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে রয়েছে বাঘাদিয়া গ্রামের আলী আকবরের ছেলে ফিরোজ শিকদার, একই গ্রামের ইমারত শিকদারের ছেলে টুটুল শিকদার, শহীদ মোল্যার ছেলে কালু মোল্যা। তার স্থানীয় প্রত্যক্ষ ক্ষমতার মূল উৎস দিগনগর ইউপি সদস্য বাঘাদিয়া গ্রামের সাদ্দাম শিকদার, বাঘাদিয়া গ্রামের আসমত মোল্যার ছেলে বাবু মোল্যা। বিশু ম-লের দেখাদেখি মানব পাচারে নেমে পড়েছে গ্রামের অনেকেই।
উপুর্যপরি সরেজমিন তথ্য সংগ্রহে জানা গেছে উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের খাস বাঘাদিয়া গ্রামের ছামাদ মুন্সীর ছেলে রাজীব মুন্সী (২৩) কৃষক পিতার অভাবের সংসারে হাল ধরতে বাবার ভিটামাটি বিক্রি করে ইতালি যাওয়ার জন্য বিশু মন্ডলের সাথে ১৩ লাখ টাকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন। বিশু মন্ডল প্রথমে তাকে দুবাই নেয়। সেখান থেকে লিবিয়া নিয়ে যায়। লিবিয়ায় নিয়ে প্রথমে ১মাস কাথত গেম ঘরে আটকে রাখে। পরে সেদেশের পুলিশ রাজীবকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশের কাছ থেকে দালাল চক্র তাকে ছাড়িয়ে এনে প্রায় ৫ মাস আটকে রাখে। পরে সেখান থেকে সে দেশে ফিরে আসে। রাজীব মুন্সী জানায় তার কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছে। তার সাথে আরও তিনজন ছিলো, তাদের থেকে ১৬ লাখ করে টাকা নিয়েছে। আমরা চারজনই কোনরকম জীবন নিয়ে দেশে ফিরে এসেছি। এখন বিশুর কাছে টাকা চাইতে গেলে সে আমাদের মারধরসহ মামলার হুমকি দেয়। আমাদের চোখে অন্ধকার ভবিষ্যৎ।
রাজীবের মা রোকেয়া বেগম জানান, আমার ভিটা মাটি বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরানোর জন্য আমার ছেলে রাজীবকে ইতালি পাঠানোর জন্য দালাল চক্রের হোতা বিশুর সাথে ১৩ লাখ টাকায় চুক্তি করি। পরে নগদ ১৩ লাখ টাকা দিয়ে আসি বিশুর কাছে। সে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় নিয়ে ৬-৭ মাস আটকে রাখে। আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমরা বলি ছেলেকে ইতালি পাঠানো লাগবেনা, জীবিত দেশে ফেরত এনে দেন। গত একমাস হলো আমার ছেলে দেশে এসেছে। এখন বিশু মন্ডলের কাছে টাকা চাইলে সে আমাদের মারধরের হুমকি দেয়। আমি প্রশাসনের কাছে এই মানববপাচারকারীর বিচার চাই। আর কোন মা যেন আমার মতো এভাবে পথে পথে না কান্দে।
ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গত ৬ মাস আগে দেশ ত্যাগ করেন বাঘাদিয়া গ্রামের গোবিন্দ ম-লের ছেলে জয় ম-ল (২২)। ছয় মাস আগে বিশুর সাথে ১১ লাখ টাকা চুক্তি করে লিবিয়াতে পৌছায় জয় ম-ল। পৌছানোর পরে বিভিন্ন সময় তাকে মাফিয়া চক্র দিয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে ভিডিও পাঠিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে আরও ৬ লাখ টাকা। এনিয়ে তার থেকে মোট ১৭ লাখ টাকা নিয়েছে। আজ-কাল করে ছয় মাস পার হয়ে গেলেও সে ইতালিতে পৌছাতে পারেনি। গোবিন্দ ম-ল ব্যাংক লোন আর তার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা দিয়েছে বিশুর হাতে। পরিবারের দাবি ইতালিতে পাঠাতে না পারলে তার ছেলে দেশে ফিরিয়ে আনুক। কিন্তু কিছুই করছেনা। এবিষয়ে কিছু বলতে গেলে তার ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারা বিশুর কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
গত ছয় মাস আগে গোহালা ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা গ্রামের খালেক মোল্যার ছেলে রমজান মোল্যা (২১) ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করে বর্তমানে লিবিয়ার ‘গেম’ ঘরে আটকা। গত তিনমাস আগে তাকে গেম দেয়ার কথা বলে ট্রলারে উঠায়। পরে পুলিশের হাতে ধরা খায় রমজান। পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে ৯ দিন জঙ্গলে ছিলো। পরে তাকে উদ্ধার করতে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। এনিয়ে মোট ১৪ লাখ টাকা নিয়েছে। আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে বসে আছে। এই টাকা না দিলে রমজানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বামনডাঙ্গা গ্রামের এক ব্যক্তির নিকট ব্ল্যাঙ্ক ষ্ট্যাম্প (ষ্ট্যাম্প নং ৪১৮৯, তারিখ ১২.১১.২০২২ ইং) দিয়ে তাকে ইতালি নিবে বলে পাসপোর্ট জমা নিয়ে তার থেকে ১৭ লাখ টাকা নিয়েছে বিশু মন্ডল। ভূক্তভোগী ঐ ব্যক্তি জানান, এখন বিশুর কাছে টাকা চাইতে গেলে উল্টো মামলার হুমকি দেয়। আমাকে ইতালিও পাঠায় না আর আমার টাকাও ফেরত দেয় না। আমি গত তিনদিন আগে তার বাঘাদিয়া অফিসে গেলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে মারপিট করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরইহাট গ্রামের এক ব্যক্তি লিবিয়ায় ৬ মাস আটক থেকে ফিরে এসে জানায়, আমরা একসাথে ১১জন বিশুর কাছে মাথাপিছু ১৩ থেকে ১৭ লাখ টাকা দিয়ে ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়ি। আমাদের লিবিয়া নিয়ে ৬ মাস আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করেছে। বিশু মন্ডল নিজে আমাদের সকলকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছিলো। ওখানকার পুলিশ আমাদের ওখানকার মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলো। মাফিয়ারা আমাদের গীভর জঙ্গলের মধ্যে হাত-পা বেধে ২ দিন ফেলে রেখেছিলো। সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে মারপিট করতো। ২ দিনে আমাদের একটু পানি ছাড়া কিছুই খেতে দেয়নি। এমনভাবে নির্যাতন করেছে সারা শরীরে ঘা হয়ে গেছে। পরে বিশু আমাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আমাদের সেখান থেকে ছাড়িয়ে এনেছে। পরে আমাদের লিবিয়ায় একটি গেম ঘরে আটকে রাখে। সেখানে আটকে রেখে আমাদের অমানবিক নির্যাতন করে তার ভিডিও দেখিয়ে আমাদের পরিবারের কাছে আরো টাকা চায়। পরে আমাদের পরিবারের লোকজন তাকে হাতে পায় ধরে আমাদের দেশে ফেরত এনেছে। এখন আমাদের টাকা ফেরত চাইলে সে আমাদের উল্টো মামলার ভয়ভীতি দেখায়।
রাজৈর থানার আমগ্রামের মোসলেম খালাসীর ছেলে পারভেজ খালাসীকে ইতালি পাঠানোর জন্য ৮ লাখ টাকা নেয় বিশু মন্ডল। পরে তাকে লিবিয়ায় নিয়েছে বিশুর দালাল চক্র। গোহালার বড় মনিরকান্দি গ্রামের নাজমুলেরও একই অবস্থা। গত ৩ মাস ধরে তাদের কোন খবর জানে না পরিবারের লোকজন। এনিয়ে বিশুর কাছে আসলে বলে তারা গেম ঘরে আছে। এখান থেকে কথা বলা যায় না। পরিবারের দাবি ছেলেকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার। বরই হাট গ্রামের উজ্জল শেখ ১৪ লাখ টাকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছে। বর্তমানে সে লিবিয়ায় গেম ঘরে আটকা আছে। কিছুদিন আগে তাকে মাফিয়া চক্র তুলে নিয়ে যায়। পরে বিশু তার পরিবারের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে মাফিয়াদের থেকে ছাড়িয়ে আনে। বর্তমানে সে লিবিয়ায় আছে। সপ্তাহে একদিন পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয় তার। বিশু ম-লের পাচার চক্রের হাতে ধরা খাওয়া অনেকেই লোক লজ্জা ও হামলা মামলার ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাদের দাবি পুলিশ বিশু ম-লসহ পাচারকারীদের গ্রেফতার করলে তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন।
মানবপাচার চক্রের মূল হোতা বিশু মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করতে তার অফিসে গেলে তিনি তার অফিসের ২য় তলা থেকে নামেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার (০১৭৭৬২১০৮১৪ ) যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি। তার বাহিনীর মূল হোতা ফিরোজ শিকদারের সাথে আলাপ করতে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের সাথে বিরূপ আচরণ করেন।
অন্যদিকে মানবপাচার করে বিশু ম-ল বিপুল সম্পত্তির মালিক বনে গেছে। তার বাঘাদিয়া গ্রামের পৈত্রিক বাড়িতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আলিশান ভবন নির্মাণ করেছে। বাঘাদিয়া প্রাথমিক স্কুল মাঠ সংলগ্ন জায়গায় জমি কিনে গড়ে তুলেছে কোটি টাকার অফিস, বাড়ি, মার্কেট। বাঘাদিয়া গ্রামের মাঠে নির্জন জায়গায় গড়ে তুলেছে বাংলা টাইপের বাগান বাড়ি। অনেকেই বলেছেন বিশুর অবৈধ রোজগারের টাকা ভারতসহ দুবাই লিবিয়া তিউনিসিয়ায় মাদক, স্বর্ণচোরাচালনসহ বিভিন্ন ব্যবসায় রয়েছে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ।
সিন্দিয়াঘাট ফাড়ির ইনচার্জ এসআই শওকত হোসেন জানান, আমাদের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ নেই। ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন লিখিত অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মুকসুদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, আমরা জানতে পেরেছি যে বিশু মন্ডল একজন শীর্ষ মানবপাচারকারী। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম ইমাম রাজী টুলু জানান, মানব পাচারকারী বিশু মন্ডলের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। তাকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



Admin
