পঁচিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার সকলের প্রতি শুভেচ্ছা কৃতজ্ঞতা অভিবাদন

পঁচিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার  সকলের প্রতি শুভেচ্ছা কৃতজ্ঞতা অভিবাদন

বিশ্বজুড়ে চলছে যুদ্ধ এবং যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। ভূরাজনীতির নামে আমাদের চারপাশে ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে আধিপত্য জোরদারে সদর-অন্দরে ক্রমাগত সাজ সজ্জার প্রবল প্রতাপে গরীব দেশের চিড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা। এর মধ্যেই দেশে ক্ষমতার নাটাই ধরার বৈধ সিঁড়ি ভোটের বাক্স ঘরে তোলার আগাম ব্যবস্থায় হাল আমলের রাজনীতি নামের বহুকৌশলের বিদঘুটে পরিস্থিতি নৈরাজ্য থেকে সহিংসমুখর হয়ে ওঠার আশঙ্কা ক্রমশ আমাদের চেতনাচিত্ত গ্রাস করতে উদ্যত। ফলতঃ আমরা আপনাদের মতো যন্ত্রণাদগ্ধ বিমর্ষ; এর মাঝে আমাদের পঁচিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনাড়ম্বর উদযাপনের প্রয়াস; নেহায়েৎ চলার পথে ফেলে আসা স্মৃতির আলোয় ভবিষ্যতের অনিশ্চিত আলো-অন্ধকারে স্বপ্ন নির্মাণের আকাক্সক্ষা। প্রিয়  লেখক-পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা শুভানুধ্যায়ী সকলকে আমাদের নিরন্তর শুভেচ্ছা এবং স্বপ্ন বুননের যুদ্ধে সাথী হওয়ার আহ্বান।

নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমণে মহামারী করোনাকাল পার হয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিতেই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ; ইউক্রেইনের পাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্র সমূহ এবং তাদের সামরিক সংগঠন ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন) অর্থ-সমরাস্ত্র সম্ভার বরাদ্দ সহযোগিতা দিয়ে সর্বাতœক সক্রিয় এবং যুদ্ধ বৎসর পার করে চলছে। ব্যাপক প্রাণহানি ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিনয়ত ঘটছে তবুও থামছে না। এটি নিরসনের কার্যকর আন্তরিক উদ্যোগ অনুপস্থিত। যুদ্ধের তাপ বিশ্ববাজার ঘুরে বাংলাদেশে এসে পড়েছে। জ্বালানী তেলসহ আমদানী পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বৎসর আগের গরম বাজার এখনও স্বাভাবিক হয়নি বরং নতুন পার্বণ, নতুন ফেরকার অজুহাতে বেসামাল নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধমুখিতায় জনগণের নাভিশ্বাস ক্রমাগত বাড়ছে। সম্প্রতি এই যুদ্ধের প্রতিদিনের চালচিত্র আড়াল করেছে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বে নিমজ্জিত ইসরাইল ফিলিস্তিনের সংকটের নতুন মাত্রার যুদ্ধ। গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস (কারও কারও দাবি সন্ত্রাসী সংগঠন) ইসরাইল সীমায় হামলা চালালে ইসরাইল পাল্টা হামলায় যুদ্ধ ঘোষণা করে বিমান-মিসাইল ব্যবহার করে নির্বিচার হত্যায় নেমে স্থল-নৌ -বিমান যুদ্ধে জড়িয়েছে। উভয় পক্ষে হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। পুরো ফিলিস্তিন এখন অবরুদ্ধ ধ্বংসস্তুপ, এ ঘটনায় তাবৎ বিশ্ববাসী ক্ষুব্দ ব্যথিত হলেও পক্ষালম্বনকারীরা নির্লজ্জের ভূমিকায় সমর্থন জানাচ্ছেন। ঔপনিবেশ ত্যাগকালে বৃটিশ রাজশক্তি এবং মিত্র আমেরিকা ও অনুগত সতীর্থদের সহযোগিতায় ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূঘ- দখল করে নতুন রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করলে এই বিরোধ-যুদ্ধের চূড়ান্ত সুত্রপাত এবং পচাত্তর বৎসর ধরে ক্রমাগত চলছে। দেশ বিদেশে এই আগ্রাসন-গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হলেও ইসরাইলী যুদ্ধবাজ ও তাদের সমর্থনে মোড়ল শক্তিধর রাষ্ট্র নির্বিকার। ফলতঃ আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, যন্ত্রণা শোককাতরতা চেতনাশূন্য স্তম্ভিত করছে।

ভূরাজনীতির নামে আধিপত্য বিস্তারের খেলা এ অঞ্চলে ছড়াতে চেষ্টা হচ্ছে। চীন তাইওয়ান দ্বন্দ্বের জের ধরে পরাশক্তির গোপন লড়াই, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার উন্মাদনার আওয়াজ প্রকাশ পাচ্ছে। অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ অতিমাত্রায় গুরুত্বে মোড়লদের তরফে বশে রাখার কলাকৌশলের ক্রমাগত চাপে পড়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিবদমান রাজনীতি পূর্ণমাত্রায় অস্থির অশান্ত। একটার পর একটা ডেটলাইন পার হচ্ছে আতঙ্ক উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি বহু মত-পথের উন্মুক্ত মাঠ; মতাদর্শিক বিরোধের তুলনায় এখানে অপছন্দের বৈরিতা সাধারণ দ্বন্দ্ব থেকে বোমা মেরে নির্মূলের পথে চলেছে। এর ইতিহাস রক্তাক্ত মহান মুক্তিযুদ্ধে পক্ষ-বিপক্ষের শিকড়ে গ্রথিত। রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংলাপ-সমঝোতার বিপরীতে আপোষহীনতার উৎকট প্রভাবে উচ্চকিত। গণন্ত্রের আদর্শে অন্তঃপ্রাণ হলেও রাজনৈতিক ব্যক্তি-সংগঠনে গণতান্ত্রিক চর্চা অনুপস্থিত। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকার ও বিরোধী রাজনীতির শিবিরে নির্বাচন বৈতরণী পার হয়ে ক্ষমতার মসনদে পৌছানোর লড়াই একটি ভয়ানক পরিস্থিতির আভাষ দিচ্ছে। ২৮ অক্টোবর ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতা ফের শুর হয়েছে। এর রেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটিই এখন আমাদের দুঃশ্চিন্তা অণ্যতম উৎস। জাতির ভাগ্যে কতটা দুর্ভোগ জুটবে কতটা খেসারত দিতে হবে আমরা জানি না।

প্রিয় পাঠক নিশ্চয় অবগত যে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে গণমাধ্যমের ভূমিকা আজ বিতর্কের ঊর্ধে নয়, রাশিয়া-ইউক্রেইন, হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের মতো সংবেদনশীল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-ক্ষেত্রে পশ্চিমা গণমাধ্যমের ভূমিকা নিরপেক্ষতার বিপরীতে পক্ষধারী প্রচার-প্রপাগান্ডার যন্ত্র হয়ে উঠেছে। ইতোপূর্বে আলজাজিরার মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি একপেশে বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেশের অভ্যন্তরে গণমাধ্যম শতধাবিভক্ত এবং আরোপিত প্রতিবেদন প্রকাশেও নজির রেখেছে। মানবাধিকার সংগঠনের অপরিনামদর্শী প্রতিবেদন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। গণমাধ্যমের নৈতিক স্বাধীনতা, অঙ্গীকার আজ ফাঁকা বুলির পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণহীন সামাজিক মাধ্যমের মতো নির্বিচার মতপ্রকাশের মাধ্যমে পর্যবসিত হচ্ছে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আমরাও বস্তুনিষ্ঠতার আদর্শ উদ্দীপনা নিয়ে বুক চেতিয়ে দাঁড়াতে কুণ্ঠিত। তবুও বিগত দিনের মতো সৎসাহসে সত্য প্রকাশে বদ্ধ পরিকর। আমাদের সংগ্রামী সাথী হতে প্রিয় লেখক-পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী সকলকে পুনর্বার শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা।