জয় আমাদের হবেই - মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লড়াই চলবে

জয় আমাদের হবেই - মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লড়াই চলবে

আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ খৃষ্টাব্দ, জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের গর্বিত বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার বিজয়ে যথাযথ গুরুত্ব-মর্যাদায় সমারোহে উদযাপিত হচ্ছে। জাতির বিজয় দিবসে সকল শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে সকলকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী (সাবেক রেসকোর্স) ময়দানে পাকিস্তানী শোষক-হানাদার বাহিনীর  সেনাপতি (ইস্টার্ন থিয়েটার) ও সামরিক আইন প্রশাসক লে.জে. আমির আবদুল্লা খান নিয়াজী ৯৩ হাজার (মতান্তরে ৯২ হাজার) বর্বর সদস্যসহ বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গণের প্রধান লে.জে জগজিৎ সিং অরোরার হাতে নিঃশর্ত আতœসমর্পণ করে। ২৬ মার্চের কালরাতে পাকিস্থানী হানাদার ও তাদের দোসর কুলাঙ্গার দালাল, রাজাকারদের সংগে নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর আধুনিক মারণাস্ত্রে আক্রমণ করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৫ মার্চ রাতে ক্র্যাকডাউন শুরু হলে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ীদলের জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানম-ির বত্রিশ নম্বরের বাসভবনে থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং এর অব্যবহিত পরেই পাকি কমান্ডোদের হাতে গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিকামী জনতা ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষ দেশব্যাপী ঝাপিয়ে পড়ে শত্রুর মোকাবেলা করে অসীম সাহসে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সীমান্তবর্তী ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে ১৪ এপ্রিল সরকার গঠন করে কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর বৈদ্যনাথতলায় আ¤্রকাননে ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এর মৌলনীতি যুক্ত করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনা করেন। পাকিস্তানী পক্ষে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম দলীয়ভাবে এবং ইসলামপন্থি কিছু কুলাঙ্গার সহযোগী মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানী দালাল বাহিনী হিসেবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। নয় মাসব্যাপী নির্বিচার হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগে বাংলার মাটি-আকাশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ, চার লক্ষ আটষট্টি হাজার ছয়শত (সূত্র:ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি) মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে কাক্সিক্ষত বিজয় আসে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে; বর্বর পাকিস্তানী হানাদার সদস্যের নিঃশর্ত আতœসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয়যাত্রা সূচিত হয়।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে ফিরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এবং দ্রুত জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূল নীতি ধারণ করে সংবিধান প্রণয়ন সম্পন্ন করেন। এই নীতিমালাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে স্বীকৃত। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বৎসরের মাথায় পরাজিত শক্তির নীলনক্সা, মদদ ও সহযোগিতায় এদেশীয় কুলাঙ্গার ঘাতক সদস্যরা পচাত্তরের পনেরই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। প্রবাসে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। জাতিরজনককে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির উচ্ছিষ্টভোগী স্বাধীনতাবিরোধী ও সুবিধাবাদী ক্ষমতা দখলকারী বর্ণচোরা গোষ্ঠী ২১ বৎসর ক্ষমতা দখল করে সংবিধানের মূলনীতিতে বেয়নেট চালিয়ে পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন শুরু করে। ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামী ঐতিহ্যর প্রতীক শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, স্মৃতি সৌধ, শিখা অনির্বাণ, বিজয় স্তম্ভ, বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-কৃষ্টি, বিশেষতঃ বঙ্গাব্দ উদযাপনে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ অনুষ্ঠানমালা, লোকজ শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য-নাটক, ছবি-চলচ্চিত্র, চারু-কারুকলাসহ সকল সৃজনশীল চর্যা-চর্চার উপকরণাদির এরা ঘোরতর বিরোধী এবং সমূলে বিনাশ তাদের একান্ত কাম্য ও সক্রিয়তা।

প্রবাসজীবন থেকে ফিরে জাতিরজনকের কন্যা অসীম সাহসে দেশে ফিরে পিতার রেখে যাওয়া রাজনীতি ও দলকে সংগঠিত করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দেশ পুনর্গঠনে অব্যাহত ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু পরাজিত শক্তি বসে নেই, ২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউতে তাকেসহ আওয়ামী নেতৃবৃন্দ হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা করে, এখনো তারা নানান ছুতো-কৌশলে বিরোধীতা বজায় রেখে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, গ্রেনেড হামলার বিচার শ্রত্রুপক্ষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। উপরন্তু শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত কর্মযজ্ঞে দেশজুড়ে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভাবনার দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পেরেছেন। এখন যেকোন মূল্যে শেখ হাসিনার সরকারকে উচ্ছেদের অভীষ্টে রাজনীতির নেপথ্য ঐক্যজোট সর্বশক্তি লড়াইয়ে দৃশ্যমান। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কাক্সিক্ষত জয় পরাজয় মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদ দখলের লড়াই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে সবিশেষ গুরুত্বে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। আমরা মনে করি লড়াইয়ে জয় আমাদের হবেই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লড়াই অব্যাহত থাকবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি বাংলাদেশের অহঙ্কার; রক্ত ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত। আমরা আশা করি, দৃঢ় বিশ্বাস করি বাঙালির জাতিগত অস্তিত্বের বিরুদ্ধে কোন আঘাত এলে অবশ্যই বাঙলা মায়ের সন্তানেরা দৃপ্ত পদক্ষেপে সর্বাতœক লড়াইয়ে প্রতিরোধে শামিল হবেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রিয় পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী এবং গর্বিত দেশবাসী সকলকে বিজয় দিবসের নিরন্তর শুভেচ্ছা। জয় বাংলা।