আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে ঘরে তালা
মেহের মামুন: উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের কদমপুর আশ্রয়ন প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে “জমি আছে ঘর নাই, জমিও নাই ঘরও নাই” প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের জমিসহ ঘর উপহার দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার ধারাবাহিকতায় উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের কদমপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে ২৭টি ঘর দেয়া হয়েছে সুবিধাভোগীদের মাঝে। এসকল ঘর বিতরণের সময়ই ছিলো নানান অভিযোগ। যাদের এসব প্রকল্পের আওতায় আসার কথা তারা না এসে অন্যরা এসেছে। এখানে অবৈধ টাকা লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। কদমপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের ২৬ টি ঘরের মধ্যে বর্তমানে ১৩টি ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে। এই ১৩টি ঘর বরাদ্দের নামে দলিলে থাকলেও সরেজমিনে রয়েছে তালা বদ্ধ। এইসব ঘরে কেউ বসবাস করে না। কারন যাদের নামে এই ঘর নেয়া তাদের আলাদা বাড়ি রয়েছে। রয়েছে ভালোভাবে বসবাসের অবস্থা। কেউ আবার থাকেন স্বামী স্ত্রীসহ সৌদি আরবে। আবার কেউ থাকেন ঢাকায়। ঘরে না থাকার কারনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না হওয়ায় বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে মুকসুদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও উপজেলার পশারগাতী ইউনিয়নের কৃষ্ণাদিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের তিন ভাগের দুই ভাগ ঘরে ঝুলছে তালা। উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের ফতেপট্রী গ্রামে উপজেলার সব চাইতে বড় আশ্রয়ন প্রকল্প। সেখানে গেলে হতাশ হতে পারেন যে কেউ। কারণ এখানকার প্রকল্পের ঘরের ৩শ ঘরের মধ্যে মধ্যে মাত্র ৩২ টি পরিবার বসত করে। বাকী ঘরের দরজায় দরজায় ঝুলছে তালা। যায়, উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের কদমপুর গ্রামে অবস্থিত আশ্রয়ন প্রকল্পের বেহাল দশা। এই প্রকল্পের জমিসহ ঘর বরাদ্দে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। যার কারনে ২৬টি ঘরের ১৩ টিতেই ঝুলছে তালা। ঘর থাকলেও নেই থাকার মানুষ। নামে বরাদ্দ নিয়ে তারা থাকছেন গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। প্রকল্পে ঢুকতেই প্রথমে যে দুটি ঘর রয়েছে তারা একই পরিবারের। ইয়ার আলী শেখের ছেলে পাচু শেখ এবং তার বোন। পাচু শেখ ঘরে বসবাস করলেও তার বোন বসবাস করে তার স্বামীর বাড়ি। অথচ তার নামে রয়েছে একটি ঘর যেটিতে তালা ঝুলছে। তার স্বামীর নামেও প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তার নিজের নামে জমি ও আগে থেকেই ঘর রয়েছে। একই প্রকল্পে একই পরিবারের নামে রয়েছে ৪টি ঘর। যে চারটি ঘরের মাত্র ১টিতে লোক বসবাস করে। বাকীদের রয়েছে অন্য জায়গায় বাড়িঘর। কদমপুর গ্রামের আওলাদ আলী শেখের ছেলে নজরুল শেখ। এই নজরুল শেখের পরিবারের ৪ সদস্যের নামে রয়েছে ৪টি ঘর। তাদের মধ্যে শুধু নজরুল শেখই তার নামে বরাদ্দকৃত ঘরে থাকেন। তাছাড়া তার বোন শান্তা বেগমের বিয়ে হয়েছে উপজেলার খান্দারপাড়া ইউনিয়নের খান্দারপাড়া গ্রামে। তার শশুর বাড়িতেই তিনি থাকেন। অথচ তার নামে রয়েছে একটি ঘর। সেই ঘরে ঝুলছে তালা। নজরুল শেখের ছেলে বাধন শেখ, সে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। গ্রামে তার আলাদা জায়গায় রয়েছে বাড়ি। অথচ তার নামে রয়েছে একটি ঘর যেখানে শুরু থেকে এই পর্যন্ত ঝুলছে তালা। নজরুলের ভাই কামরুল হাসান। বউ বাচ্চা নিয়ে একই গ্রামের অনত্র তার নিজ বাড়িতে থাকেন। অথচ নিজেকে ভুমিহীন দেখিয়ে নিয়েছেন ঘরের বরাদ্দ। যে ঘরের দরজা সে এখন পর্যন্ত খোলেননি। তালা ঝুলিয়ে রাখছেন।
এছাড়াও একই প্রকল্পের ভাকুড়ী গ্রামের হেনা বেগম, পুরাতন মুকসুদপুরের ইয়াসিন শেখ, একই গ্রামের রেক্সনা বেগম, চুন্নু শেখ, আনো শেখ, কৃষ্ণাদিয়া গ্রামের মোশারেফ হোসেন, দিঘিরপাড় গ্রামের রোকেয়া বেগম, দুর্গাপুর গ্রামের মরিয়ম বেগম, পূর্ব সালিনাবক্সা গ্রামের পলাশ সরদার এবং হাওয়া বেগমের ঘরে ঝুলছে তালা। কৃষ্ণাদিয়া গ্রামের মোশারেফ হোসেন তার মেয়েকে ভূমিহীন দেখিয়ে নিয়েছেন বরাদ্দকৃত আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর। অথচ তারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই সৌদি আরব প্রবাসী। তাদের নিজ গ্রামে রয়েছে নিজস্ব বাড়ি। তাদের সামাজিক অবস্থানও ভালো। তাহলে সুবিধাভোগী বাছাইয়ের এই স্বেচ্ছাচারীতার দায় কার? নাকি মোটা অংকের বিনিময়ে এইসব ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে? এলাকার সচেতন মহলের মাঝে এ্ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এর কোন সমাধান হয়নি।
গোবিন্দপুর চেয়ারম্যান ওবাইদুল ইসলাম জানান, ভূমিহীন নামের তালিকা করার সময় আমাদেরকে নামে মাত্র রাখা হয়েছিলো, সকল কাজ উপজেলা প্রশাসন করেছিলো। আমি এই বিষয়ে তেমন কিছুই জানিনা। ইউনিয়নের এই ভূমিহীন যারা আছেন তারা তো তার দেয়া সনদেই ভূমিহীন হয়েছেন। তাহলে এই সকল সুবিধাভোগীরা ভূমিহীন সনদ আনলো কোথা থেকে। নাকি জাল সনদ, এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি চেয়ারম্যান।
মুকসুদপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি সব ঘরগুলোতে লোক থাকে না। নিজে গিয়েও দেখেছি অর্ধেকের বেশি ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে। তালিকা করার সময় সঠিকভাবে তালিকা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তালিকা করে উপজেলা সহকারি কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছি, সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন ঘরে কেউ বসবাস করলে আর না করলে আমার কী করার আছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ফায়জুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর দেয়া হয়েছে। যারা পাওয়ার উপযোগী তাদের মাঝেই বিতরণ করা হয়েছে। দু’একটা ঝামেলা থাকতে পারে। মুকসুদপুরে ৬শ ৩৩ টি ঘর প্রদান করা হয়েছে। যারা ঘরে থাকেনা তাদের তালিকা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪৩ জনের তালিকা করে জেলায় পাঠানো হয়েছে। এদের বরাদ্দ বাদ দিয়ে যারা প্রকৃত ভূমিহীন আছে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে তাদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম ইমাম রাজী টুলু জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ আছে অনেক ঘরে লোকজন বসত করেনা। যারা বরাদ্দ নিয়ে অবহেলা করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসকল লোক বসবাস করেনা তাদের তালিকা করে ইতোমধ্যে ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। যারা থাকে না তাদের বরাদ্দ বাতিল করে সেই সকল ঘরে যারা সঠিক ভূমিহীন তাদের যাচাই বাছাই করে বরাদ্দ দেয়া হবে।



Admin
