বহুল কাঙ্ক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন-অবাধ নিরপেক্ষ সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠিত হোক

বহুল কাঙ্ক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন-অবাধ নিরপেক্ষ সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠিত হোক

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ২১৫ গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী) আসন এলাকা। কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন পত্র দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ শেষে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে নতুন বৎসরের আগামী ৭ জানুয়ারী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সবার জানা এবারের নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দারণভাবে উত্তেজনাপূর্ণ। গণতান্ত্রিকভাবে সরকার বদলের উপায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন দেশের বিবদমান রাজনীতির অন্তর্নিহিত বৈরীতায় ক্ষমতার মসনদে আসীন হওয়ার প্রাণান্ত লড়াই। বিগত দিনের মতো গ্রহণ-বর্জনসহ নানান রকম হিসেব-নিকেশে রাজনৈতিক দলগুলি অবস্থান গ্রহণে রাজনৈতিক নীতি-কৌশলে কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে, এবারও ব্যতিক্রম নয়। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ক্ষমতাশীন সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, ও তার দীর্ঘদিনের সাথী জামায়াতে ইসলামীসহ বাম-ডানের পক্ষাবলম্বনকারী সমমনা রাজনৈতিক দলের জোট আন্দোলন করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণে বিরত থেকে নির্বাচনের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ একাদিক্রমে পালন করে চলেছে। ইতোমধ্যে তাদের কর্মসূচি পালনের মধ্যেই সড়ক যানবাহনে ও রেলপথে ট্রেনবগিতে অগ্নিসন্ত্রাসে প্রাণ-সম্পদহানির একাধিক ঘটনা দেশজুড়ে আতঙ্ক ও জনগণকে ক্ষুব্দ করে তুলেছে। বলতে গেলে আমারা একটা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অতিক্রম করছি। এর মধ্যেই সাংবিধানিক নির্দেশনা মতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বর্জনের কারণে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে ক্ষশতাশীন সরকার দলীয় সিদ্ধান্তে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহিত করা হয়েছে, এমনকি দলীয় নেতাও স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ গ্রহণ করতে পারছেন। বলা যায় নির্বাচন আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। সেভাবে আমাদের আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে নেীকার প্রার্থী মুহাম্মদ ফারক খান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকলেও বলা চলে আওয়ামী ঘরানার প্রার্থী মো.কাবির মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আবহ তৈরি হয়েছে। আমরা চাই যেকোন মূল্যে নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠিত হোক। কারণ এবারের নির্বাচনে প্রার্থীর জয় পরাজয়ের বাইরেও এর সফলতা-গ্রহণযোগ্যতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে নানমুখী ষড়যন্ত্রের পেক্ষাপটে দেশ ও সরকারের মুখ উজ্জ্বলের বিষয়টি গভীরভাবে জড়িত। আমরা চাই প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীসহ সকল কর্র্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল যথাযথ ভূমিকা আমাদেরকে শান্তি ও অগ্রযাত্রার পথ দেখাবে।  

দেশজুড়ে ইতোমধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণহানিসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে কমিশন গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটি বহু প্রার্থী, নেতা-কর্মীকে কারণ দর্শিয়ে তলব করেছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এবিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্র্রো মিডিয়ার গণমাধ্যম সমূহে প্রতিদিনের সবিস্তার সংবাদ-প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে যার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার নয়। আমরা মনে করি সকল প্রার্থী ও তার নেতা-কর্মী আচরণ বিধি পালন ও শান্তিপূর্ণ প্রচার কার্যক্রম চালাবেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, প্রতিযোগিতামূলক করতে প্রার্থী নেতা কর্মীর ভূমিকাই অগ্রগণ্য। তারা শৃঙ্খলা বজায় রাখলে নির্বাচন অবশ্যই অর্থবহ হবে। রাজনৈতিক কারণে যারা নির্বাচন বানচাল করতে চাচ্ছেন, তাদেরকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ হলে তাদের কটূ কথার অভিযোগ শোনা হবে আমাদের দুর্ভাগ্য। এর পরিনাম পরিণতি হবে সবার জন্য অনাকাক্সিক্ষত।

স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের বৈশিষ্ঠ্য ভিন্ন, বিশেষভাবে জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা মুখ্য। রাজনীতির আদর্শে রাজনৈতিক দল গঠিত ও আদর্শ-উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, পথ-পদ্ধতি ভিন্নতায় জনসমর্থন নিশ্চিত হয়। নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের মেনুফেস্ট-ইশতেহার প্রকাশে জনগণ তাদের পছন্দে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বিজয়ী আসনের সংখ্যার ফলাফলে জাতীয় সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা এবং একই সাথে সরকার গঠন কিংবা বিরোধী দলে থেকে দেশ পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহণ করলেও রাজনৈতিক দলের প্রভাব অধিক। রাজনৈতিক সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। বিগত দিনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও ছিল জনগণের প্রত্যাশার তুলনায় হতাশাজনক। রাজনৈতিক মতপার্থক্য, সরকারের প্রতিক্রিয়া, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নির্বাচন ব্যবস্থা জনআস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেনি। কার্যত বর্তমান কমিশনের জন্য এবারের নির্বাচন চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ ও অগ্নিপরীক্ষার শামিল। উপরন্তু প্রতিবারেই নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন, নতুনতর আচরণ বিধিসহ নিয়মাবলী সংস্কার করেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ভোটকাটা-ব্যালট ছিনতাই, জালভোটসহ কারচুপি নিরোধে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করেও অনিয়ম ঠেকানো যাচ্ছে না। উদ্ভাবিত ইলেক্টনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমও বিতর্কের জালে বন্দি, এর সুষ্ঠু পরিপূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হয়নি।

আমরা আশাবাদী মুকসুদপুর-কাশিয়ানী আসনে নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সর্বাতœকভাবে কঠোর ব্যবস্থায় এবং প্রার্থী নেতাকর্মীর সহযোগিতায় জনগণের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে এমনটা প্রত্যাশা আমাদের সবার।