নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতায় বিজয়ী হয়ে মন্ত্রি পরিপষদ গঠনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমরা আন্তরিক অভিনন্দন শুভেচ্ছা জানিয়ে সফলতা কামনা করছি। নতুন সরকারের কাছে আমাদের জনপ্রত্যাশা অনেক; আশাকরি সময়ে পূরণ হবে।
কৌতুক স্বরে কী চাই! চাইতো অনেক কিছু বাড়ি, গাড়ী টাকা পয়সা, ব্যাংক ব্যালেন্স; আরো কত কি। কিন্তু দেবেটা কে? চাইলেই তো আর পাওয়া যায় না। উপরন্তু চাওয়ারও শেষ নাই, পাওয়ারও না। দুর্নীতিবাজদের দেখুন, তাদের হিস্টোরি শুনলে চমকে যাবেন। সাধারণ মানুষও তাজ্জব বনে এটাকে নিয়ম-নিয়তি মনে করে পথ ছেড়ে বিপথযাত্রার পাঁয়তারায় মজেছে। লাভ আর লোভে সমাজের ভেতরকার অন্ধকারে দেশটা উচ্ছন্নে যাওয়ার বাকী। ফলে আমাদের এসব কিছুই চাই না। সমাজ অবক্ষয়ের এই সময়ে রাজনীতির বুভুক্ষ লড়াইয়ে শেষতক দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করেছে। সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জন্ম রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন; ত্রিশ লাখ শহীদ চার লাখের অধিক মা-বোনের সম্ভ্রম নির্যাতন নিপীড়ন, ধ্বংসযজ্ঞের বিনিময়ে অর্জিত। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সীমান্তবর্তী ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন করে শপথ গ্রহণ করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এর মৌলনীতি যুক্ত করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনা করেন। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে ফিরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত জনআকাক্সক্ষা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এর সমর্থক-পরিপূরক রাজনৈতিক মতাদর্শ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি ধারণ করে সংবিধান প্রণয়ন সম্পন্ন করেন। কার্যত এই নীতিমালাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে স্বীকৃত। আমরা চাই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবিচল আদর্শ বাস্তবায়ন করবেন। সেই সংগে জনমানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের পরিপূরণ করবেন। একই সাথে দেশে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সমৃদ্ধির সোপান নির্মাণের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি দূরপ্রসারি কর্ম-প্রত্যয়ে জাতির অন্তরাত্মায় নজর দিতে হবে। বিশেষ করে রাজনীতির শুদ্ধকরণ, বিজতীয় আগ্রাসনে সংস্কৃতির অবক্ষয়সহ বিবিধ অনুসঙ্গে যে উপদ্রব আছে তা দূরকরণের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান করি। মহান ভাষা আন্দোলন জাতির মননে মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করেছে; মহান শহীদ দিবসের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুারি সমাগত। এ দিনে ভাষা আন্দোলন চেতনার বিচ্ছুরণ স্ফুটিত হলেও সারা বছর বাঙলা ভাষা- সংস্কৃতি থাকে বরাবরের মতো অবহেলিত। দেখেশুনে মনে হবে বাংলাদেশ অন্য কোন দেশ-সংস্কৃতির তল্পিবাহকে কলোনিতে পরিণত। কেন এমন হল তার অনুসন্ধান ও প্রতিকার খুবই জরুরী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হলেও অনেক ঘাতক, পচাত্তরে সপরিবারে জাতিজনকে হত্যাকারী ঘাতকরা বিদেশেরর মাটিতে আশ্রয় প্রশ্রয়ে দৌদ- প্রতাপে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত সরকারগুলি আমাদের আশ্বাসবাণী শোনালেও বর্তমান সরকারের নিকট আকূল আবেদন যে কোন মূল্যে ঘাতকদের দেশে ফিরিয়ে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করুন। দেশে বিদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের বাড়বাড়ন্ত জাতির জন্য হুমকি হয়ে উঠছে, তাদের প্রতিহত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সবিনয় অনুরোধ করি।
জনজীবনে যাবতীয় দৈনন্দিন ব্যয় অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা স্বাস্থ্য সকল খাতে বেড়েছে। পোষাক পরিচ্ছদ, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, চালডালসহ খাদ্য- নিত্যপণ্য, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত বর্ধিত ব্যয়-পরিবহন ভাড়া যোগ হয়ে কৃষিপণ্যসহ সকলপণ্যেও ঊচ্চমূল্যে বাজার সরগরম। কাঁচাবাজার, শুকনা বাজার, চাল, ডাল, তেল, নুন সব পণ্যেরই দাম বাড়তি হওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। নিম্নবিত্তের জন্য সরকার টিআর, কাবিখা, টিসিবিসহ বিভিন্ন প্রকল্প মাধ্যমে সহায়তা করছে। এ উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য হলেও সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নয়নে অপ্রতুল। আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সুবিধা প্রাপ্ত শ্রেণির জন্য কার্যত আফসোস না হলেও সমস্যা এর বাইরে সীমিত কিংবা স্বল্প রোজগারের বিশাল জনগোষ্ঠী পরিবারের দুর্দশা লাঘবে ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। আমরা আশা করি সরকার জনমানুষের আকাক্সক্ষা পূরণে উপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জয়বাংলা



Admin
