নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ - নৌকার বিজয় আসবেই
হায়দার হোসেন: জাতীয় সংসদের ১২তম পরিষদের নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হয়েছে। অবশ্য আরও ৬ মাস আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে মুকসুদপুর আওয়ামী লীগ। উপজেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রাকনির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভার সকল ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা এবং ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থা কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রামে ভোট প্রার্থণাকর্মী বা ক্যাম্পেইনারগণ কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এবার গোপালগঞ্জ-১ আসন অর্থাৎ সমগ্র মুকসুদপুর এবং কাশিয়ানীর ৭টি ইউনয়নে পৌনে ৪ লাখ ভোটার ১শ ৩৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোট নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। একই সাথে ব্যাপক উদ্দীপনায় মুকসুদপুর উপজেলাসহ গোপালগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। ২৬ নভেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গোপালগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন ঘোষণার সাথে সাথেই মুকসুদপুর আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিল সমাবেশ করে। ওই দিনই সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ-১ আসনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম ইমাম রাজী টুলু’র কাছ থেকে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়। মুকসুদপুর আওয়ামী লীগ সহসদপ্তর সম্পাদক আরিফুজ্জামান মোল্যা জানান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উৎসবমুখর এবং ব্যাপক ভোটার উপস্থিতির জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে ইউনিয়ন, ও উপজেলা পর্যায় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহল্লায় মহল্লায় ভোট ক্যাম্পেইন করার জন্য ক্যাম্পেইনার বা ভোট প্রার্থণাকারী কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। এখন তারা পাড়া-মহল্লায় কাজ করছেন। এজন্য মুকসুদপুর উপজেলার ১ হাজার ৩শ ৯ জন এবং কাশিয়ানি ৭ ইউনিয়নসহ মোট ১ হাজার ৮শ ৭৫ জন ভোট প্রার্থণাকারী বা ক্যাম্পেইনার মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মকা-ের সমন্বয় করছেন সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্র কমিটি। মহল্লায় মহল্লায় কোন সমস্যা হলে ভোট কেন্দ্র সমন্বয় কমিটি সমাধান না করতে পারলে সেটা সমাধান করবেন ইউনিয়ন সমন্বয় কমিটি। ইউনিয়ন সমন্বয় কমিটি যদি উদ্ভব পরিস্থিতি মীমাংসা না করতে পারলে সেটা উপজেলা নির্বাচন সমন্বয় কমিটি সরাসরি হস্তক্ষেপ করে নিম্পত্তি করবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক শেখ রনি আহম্মেদ মুকসুদপুর সংবাদকে জানান নির্বাচন কমিশন কর্র্তৃক তফসিল ঘোষণার জন্য উম্মুখ ছিল উপজেলার সকল নেতা কর্মী। তফসিল ঘোষণার পরে প্রিয় নেতার মনোনয়ন পাওয়ার পরই মুকসুদপুর আওয়ামী লীগ মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে। এছাড়া কয়েকটি ইউনিয়নে মিছিল সমাবেশ করে। এতে কৃষকলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মৎসজীবি লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, নেতাকর্মীদের মধ্যে বিজয়ের আমেজে তাদের প্রচার প্রচারণা বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
মুকসুদপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ মিনা মুকসুদপুর সংবাদের সাথে আলাপকালে জানান মুহাম্মদ ফারুক খান এর পক্ষ থেকে মুকসুদপুর এবং কাশিয়ানী অংশে কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে সাংগঠনিক অংশে ভাগ করা হয়েছে। ওই সব সাংগঠনিক অংশে সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সিনিয়র নেত্ববৃন্দ পর্যায়ক্রমে পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কেন্দ্র এমনকি ক্যাম্পেইনার পর্যন্ত খোঁজ খবর নিবেন। কোথায় কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করার যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হযেছে। সেই অনুযায়ী ভোটার প্রতি ক্যাম্পেইনের কাজ শুরু হয়েছে। অবশ্যই নৌকা মার্কার প্রতি গত ৪০ বছরের ইতিহাসে গণজোয়ার ছিল, এবার সেই জোয়ার আরও বেশী বেগবান হবে।
যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দীন আহম্মেদ মুক্ত বলেন অন্য সকল নির্বাচনের মত স্ব-শরীরে প্রচারণা তো চলবেই। আমাদের নির্বাচনী ভাষায় প্রচারণার ক্ষেত্রে এ্যাকচুয়াল ও ভার্চুয়াল দুটোকেই শ্রেণিমত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অপপ্রচার রোধেও আমাদের একটা শক্তিশালী টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছে। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি নির্বাচনী প্রচারণা চলবে। সব কথার শেষ কথা হলো নৌকার বিজয় আসবেই। তবে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে যেমন অপশক্তি কাজ করে তেমনি এবারের নির্বাচনে অপশক্তি আছে। এই অপশক্তি রোধ করতে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সকল সহযোগী সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছে। ফলাফলে এ বিজয় কেউ রুখতে পারবে বলে মনে হয় না।
সহসভাপতি হুজ্জাত হোসেন লিটু মুকসুদপুর সংবাদকে বলেন, টানা ৬ বারের মত নৌকা প্রতীক বিজয়ী দেখতে আমরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তবে দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কে কত বেশী ভোটার উপস্থিতি করে নৌকা মার্কায় বেশী ভোট দেয়া যাবে। এজন্য আমরা তৃণমূল থেকে ওয়ার্ড কেন্দ্র, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং উপজেলার নেতৃবৃন্দ দিনরাত্রি কাজ করে যাচ্ছি। ভাবতেই ভাল লাগছে যে উপজেলা কমিটির আহ্বানে অত্যন্ত সংঘবদ্ধ ভাবে ছাত্রলীগ, মৎসজীবি লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, যুবলীগ ও কৃষকলীগের উপজেলা কমিটি সম্মিলিতভাবে উপজেলা কমির্টির নির্দেশনা মেনে একই সাথে মাঠে প্রচার প্রচারণায় আছে। যেটা ১৯৭০ সালের পরে হয়তো এটাই দ্বিতীয় বার। এবার ফলাফলে সত্যিই একটা মাইলফলক হবে। অপর সহসভাপতি জাহিদুর রহমান বলেন অন্য যে কোন নির্বাচনের চাইতে এবারের নির্বাচন অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেই গোপালগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। একই প্রচারণা কমনভাবে চললেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভেদে নির্বাচনী প্রচারণা ভিন্ন কৌশলে কাজ চলবে। স্থান অবস্থা ও পরিস্থিতি বুঝে ভিন্ন নির্বাচনী কৌশল হলেও ফলাফল ভোটের হার বেশী করার জন্য সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহিদুর রহমান টুটুল বলেন ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হিসাবে প্রতি নির্বাচনে নৌকা মার্কার ভোটের হার এবং প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সাথে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। আগে মুকসুদপুর কাশিয়ানী উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল। এখন প্রতিটি স্থানে উন্নয়নের ছোঁয়া। আগে মাত্র ৩-৪ টি রাস্তা ছিল এখন সড়ক জনপথ বিভাগের ৫৫ কিলোমিটার, ১৪টি উপজেলা সড়কে ১শ ১৫ কিলোমিটার ২৯টি ইউনিয়ন সড়কে ১শ ৫০ কিলোমিটার ৬শ ৬৩টি গ্রামীণ সড়ক নির্মিত হয়েছে। এর সাথে চলাচলের জন্য ছোট বড় ৬শ ২৭টি ব্রীজ কালভার্ট নির্মিত হওয়ায় মানুষ সারা মুকসুদপুরে সর্বত্র পাকা রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। সেই সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ, টেলিযোযোগ, ইন্টারনেট থাকায় অজপাড়াগায়ের জনমানুষ শহরের সুবিধা পাচ্ছে। সেই সাথে আধুনিক চাষাবাদে শষ্য বহুমুখীকরণসহ খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণ এলাকায় রূপান্তিত হয়েছে। এজন্য সর্বসাধারণ এই উন্নয়নের গতি চলমান থাকায় নৌকা মার্কায়ই ভোট দেবেন। আগের তুলুনায় বেশী ব্যবধানে ভোট দিয়ে নতুন রেকর্ড় সৃষ্টি করে নৌকা মার্কার বিজয়ী প্রার্থী মুহাম্মদ ফারুক খানকে বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি, দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার হিসেবে পাঠাবো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব রবিউল আলম শিকদার মুকসুদপুর সংবাদকে জানান অন্যান্য নির্বাচনের চাইতে এই নির্বাচনের গুরুত্ব বেশী। সেটি বিবেচনায় এবারের নির্বাচনে গত ৫টি নির্বাচনের চাইতে বেশী গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার সনাতনী কৌশলের সাথে সাথে আধুনিক ও ডিজিটালভাবে প্রচারণায় বেশী গুরুত্ব দেয়া হবে। এ্যকচুয়াল ও ভার্চুয়াল প্রচারণায় গতি থাকবে সমানভাবে। অপ্রচারের বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নেয়া হবে তেমনি আমাদের দলীয় নেতাকর্মীবৃন্দ ঠিকমত কাজ করছে কি না তা দেখার জন্য গোপনীয় কর্মী কাজ করবে।
তিনি আরও জানান মুকসুদপুরে ১৬ ইউনিয়ন ১ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ২শ ৮৯। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯৬টি। অপরদিকে কাশিয়ানী ৭ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩শ ০১। অর্থাৎ গোপালগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৫ হাজার এবং ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ১শ ৩৮টি। আমাদের প্রতিটি কেন্দ্রেই উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ, ইউনিয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিয়ে একটি শক্তিশালী ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটি রয়েছে। রয়েছে ভোট প্রার্থণাকার বা ক্যাম্পেইনার। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। সকলের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। সকলেই অতি আনন্দের সাথে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইনশাল্লাহ গত ৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চাইতে এবার বেশী ভাল ফলাফল করার প্রত্যাশা করছি।



Admin
